সুব্রত বিশ্বাস: পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। সেই সুযোগে একের পর এক জনবিরোধী নীতি নিয়ে চলেছে রেল। বেসরকারি সংস্থার হাতে ট্রেন তুলে দেওয়া থেকে কর্মী ছাঁটাই শুরু করে রেল হাসপাতাল হঠানোর সুপরিকল্পিত নীতি প্রয়োগ করে চলেছে রেল। সাধারণ মানুষ এখন দুশ্চিন্তায় মগ্ন। ঠিক সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে রেল। নীতি নির্ধারণের বিন্দুবিসর্গ জানতে পারছেন না দেশের সাধারণ মানুষ। এমনটাই অভিযোগ কর্মী সংগঠনের। তাই প্রতিটি বিষয় জনতার নজরে আনতে এবার ওয়েবসাইট, ইউটিউব ও পত্রিকার মদত নিতে চলেছে রেলের কর্মী সংগঠন।
মঙ্গলবার পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়ন দু’টি মাধ্যমে নিজেদের সাইট খোলার পাশাপাশি পত্রিকা প্রকাশ করবে। দিল্লি থেকে এআইআরএফের সাধারণ সম্পাদক শিবগোপাল মিশ্র ও অসম থেকে সভাপতি রাখাল দাস সাইটের উদ্বোধন করবেন। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যাবহার করে রেল বেসরকারিকরণ রুখতে প্রতিবাদী আন্দোলনকে গণমুখী করতে এই মাধ্যমকে প্রধান অস্ত্র করা হবে। করোনা আবহে প্রায় সব যাত্রীবাহী ট্রেন বন্ধ রেখেছে রেল। এতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছে। অথচ রেল যে হারে অর্থের অপব্যবহার করছে তা জানেন না সাধারণ মানুষ। যা এবার জনতার সম্মুখে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছে কর্মী সংগঠন। পাশাপাশি তাঁদের আন্দোলন ও কাজের গতিমুখ জানাবেন।
অভিযোগ, দালালদের পিছনে রেলের আয়ের বহুলাংশ ব্যয় হচ্ছে। শুক্রবার রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলকে তাঁর টুইটার হ্যান্ডেলে বিষয়টি জানায় পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়ন। রেলমন্ত্রী আয় ও ব্যয় সম্পর্কিত উপদেশ চেয়ে পাঠান কর্মী সংগঠনগুলির কাছে। সেই প্রেক্ষিতে সংগঠন জানিয়েছে, রেল বিভিন্ন পদ্ধতিতে বাজার থেকে টাকা তোলে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ফাইন্যান্স করপোরেশনের মাধ্যমে। এজন্য রেলকে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা দালালি (লিজ চার্জ) দিতে হয়। যা রেল নিজেই করতে পারে। একই ভাবে রেলের নিজস্ব প্রডাকশন ইউনিট রয়েছে ছটি। যা পৃথিবী বিখ্যাত। অথচ বাইরে থেকে ইঞ্জিন, কোচ কিনছে। এজেন্সিগুলিকে দিতে হচ্ছে দালালি। নিজেদের উৎপাদিত ক্ষেত্রে এগুলি বেশি করে ব্যবহার করলে বহু অর্থ সাশ্রয় হবে বলে তাঁদের দাবি। রেলের অবসারপ্রাপ্তদের পেনশন ৫২ হাজার কোটি টাকা রেলকে দিতে হয়। যা অন্য কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মীদের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে দিতে হয় না। পাশাপাশি তাঁরা রেলমন্ত্রীকে জানান, রেল কস্মিনকালেও অলাভজনক সংস্থা ছিল না। এখন বেসরকারিকরণের জন্য ভাওতা দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানোর দায়িত্ব বেসরকারি হাতে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে রেল মন্ত্রক। এই মর্মে শিগগিরই ডাকা হতে চলেছে টেন্ডার। ১০৯ টি রুটে বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে ট্রেন চালানো হতে পারে। বেসরকারি লগ্নি বাবদ ৩০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য। তাই বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে যোগ্যতাপত্রের ভিত্তিতে টেন্ডার ডাকা হচ্ছে। আরও জানা যায়, ১০৯ টি রুটের জন্য দেড়শোর বেশি অত্যাধুনিক রেক আনা হবে। প্রতিটি রেকে ১৬টি করে কামরা থাকবে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬০ কিলোমিটার বেগে ট্রেনগুলি চালানো যাবে। ট্রেনের চালক ও গার্ডদের দিয়েই ট্রেন চালাতে পারবে দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই কর্মীদের মধ্যে তুমুল ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। টার উপর বাধ্যতামূলক স্বেচ্ছাবসর। সব মিলিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্রমেই পারদ চড়ছে কর্মীদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.