সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশে লকডাউনের নিয়ম বিধি কার্যকর করানোটা তাঁর কর্তব্য। তাই ভরদুপুরের কাটফাটা গরমে একা রাস্তায় বসে পাহাড়ায়রত এই পুলিশ কর্মী। হঠাৎ মোবাইলে বেজে ওঠায় তাকিয়ে দেখেন মোবাইলের হোয়াটস অ্যাপে (Whats App) এসেছে তাঁর সদ্যোজাত মেয়ের ছবি। লকডাউনের জেরে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। এত নৈরাজ্যের মাঝেও সন্তানের ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবরটা আগেই পেয়েছিলেন। প্রায় ১২ দিন বাদে স্বচক্ষে দেখলেন নিজের সন্তানকে।
টানা ২১ দিনের লকডাউনের জেরে ছুটি নেওয়ার কথা বলতে পারেননি উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়ার এক কনস্টেবল, রমাকান্ত নগর। কর্ম-ই ধর্ম তা আরেকবার প্রমাণ করলেন তিনি। স্ত্রী সন্তান সম্ভবা ছুটির প্রয়োজন। বাড়ি যেতে হবে, থাকতে হবে স্ত্রীয়ের সঙ্গে। কিন্তু তাঁকে প্রয়োজন দেশেরও। ‘লকডাউন’ যে শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নন আপামর ভারতবাসী, তাঁদের বোঝাতে হবে এর গুরুত্ব। তাই বাড়ি ও দেশ এই দুয়ের দোলাচলে কনস্টেবল রমাকান্ত নগর বেছে নিয়েছেন নিজের কাজকেই। সন্তানের আসার সুখবরটি পেয়েও ফিরতে পারেননি গ্রামের বাড়িতে, রয়ে গিয়েছেন কর্মক্ষেত্রেই। আজ প্রায় ১২ দিন পর বাড়ি থেকে মোবাইলে ছবিতে দেখলেন নিজের সন্তানকে। কোলে নিয়ে সন্তানকে বাবা হওয়ার আত্মতৃপ্তিকে বিসর্জন দিয়ে আপাতত মন টিকিয় রেখেছেন নিজের কাজের প্রতি। রমাকান্ত নগরের কথায়, “প্রথমে আমি বাড়ি যাব বলে ভেবেছিলাম, কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম আমার মত আরও কত পুলিশ কর্মীরা এই সময় দিন-রাত এক করে কাজ করে চলেছেন। তাদের ফেলে রেখে কী করে আমি একা বাড়ি চলে যাব? তাই শেষে নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে থেকে যাই।” জানা যায় রমাকান্ত নগরকে উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়ায় স্থানান্তর করা হয় লকডাউনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য। রমাকান্ত নগরের কথায়, “বাড়িতে যেতে না পারলেও আমার মোবাইলটাই ছিল ভরসা। রোজ কাজের ফাঁকে স্ত্রীয়ের সঙ্গে কথা বলে ওকে বোঝানোর চেষ্টা করতাম। নিজের মনকেও শক্ত করে রাখতাম যে এই সময় আমার বাড়ির তুলনায় থানারই আমাকে বেশি প্রয়োজন। তাই আমায় ফিরে গেলে চলবে না।”
ইতিমধ্যেই উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়াতে প্রায় ১৫০টি সংক্রমিত স্থানকে চিহ্নিত করে পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হয়েছে। দেশের মধ্যে আক্রান্তের নিরীখে এই রাজ্যটি সপ্তম স্থান অধিকার করেছে। আজ জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী ২১ দিনের লকডাউনের সময়সীমা বাড়িয়ে তা ৩ মে পর্যন্ত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে মোবাইলে মেয়ের ছবি দেখার সময় দীর্ঘশ্বাস ফেলেন রমাকান্ত নগর। ফাঁকা রাস্তাকর দিকে তাকিয়ে থাকেন একদৃষ্টিতে। তিনি জানেন না কবে উঠবে এই লকডাউন, কবে ফিরতে পারবেন বাড়িতে, কবেই বা স্বাভাবিক হবে এই পরিস্থিতি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.