সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পূর্বাভাস ছিলই। আবহাওয়া দপ্তরেরর আশঙ্কাকে সত্যি প্রমাণ করে পূর্ণ শক্তিতে ধূলিঝড় ধেয়ে এল দেশের দুই রাজ্য, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানে। বেসরকারি মতে, মিনিট পঁয়তাল্লিশের ভয়াল মরুঝড় এখনও পর্যন্ত প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ১২৭ জনের। আহতের সংখ্যা ১৮৩।
ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙেছে অগুনতি ঘরবাড়ি, উপড়ে পড়েছে গাছপালা, বিদ্যুতের খুঁটি। ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। উদ্বেগ বহুগুণ বাড়িয়ে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে, আগের তুলনায় শক্তি বাড়িয়ে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অংশে ফের আছড়ে পড়তে পারে ধূলিঝড়। পূর্বাভাস অনুযায়ী মরুঝড়ের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়তে পারে এই দুই রাজ্যের সীমানাবর্তী করৌলি ও ঢোলপুর এলাকায়। ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা এই দুই স্থানেই সব চেয়ে বেশি। এছাড়াও বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি হতে পারে রাজস্থানের বিকানের, সোয়াই মাধোপুর, সিকার, শ্রীগঙ্গানগর এবং জয়সলমেঢ়ে। ফের জোড়া ঝড়ের আতঙ্কে থরহরিকম্প দুই রাজ্যের বাসিন্দারা।
মরুঝড়ে মৃতদের উদ্দেশে শোকজ্ঞাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এক বার্তায় তিনি বলেছেন, “দেশের একাধিক প্রান্তে বিধ্বংসী ঝড়ে মৃত্যুতে আমি মর্মাহত। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন।’’ শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। প্রসঙ্গত, বর্তমানে কর্নাটকে আছেন যোগী আদিত্যনাথ। আগামী ১২ মে কর্নাটক বিধানসভা ভোটের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অংশ নিয়েছেন তিনিও। কিন্তু এদিনের প্রাকৃতিক ঝঞ্ঝার খবর পাওয়ামাত্র তড়িঘড়ি ত্রাণকাজ শুরু করে দিতে আধিকারিকদের নির্দেশ দেন তিনি। অন্যদিকে, রাজ্যের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের মরুঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার নির্দেশ দিয়েছেন বসুন্ধরা রাজেও। রাজস্থান সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহতদের পরিবারকে প্রশাসনের তরফে চার লক্ষ টাকা এককালীন অনুদান দেওয়া হবে। আহতরা পাবেন ২ লক্ষ থেকে ৬০,০০০ টাকার মধ্যে।
ধুলোর ঝড়। আকাশ-বাতাস কালো করে বুধবার রাতে সহসাই ধেয়ে এসেছিল সেই মারণ ঝড়। মিনিট কয়েক পরই প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত। হাওয়ার গতি এত বেশি ছিল যে, তার জেরে কার্যত খেলনার মতো উপড়ে দূরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বিদ্যুতের খুঁটি। ভেঙে পড়ে প্রচুর গাছপালা। ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। ঝড়বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে রাজস্থানের ভরতপুর জেলায়। সেখানে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আলোয়ারে রাস্তা ও গাড়িতে গাছ পড়ে ব্যাহত হয়েছে যান চলাচল। বুধবার রাত থেকেই বিস্তীর্ণ এলাকায় বিদ্যুত নেই। দেশের পশ্চিমি এই রাজ্যে মরুঝড়ে আহতের সংখ্যা প্রায় একশো। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব থেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে আগ্রা। তবে ঝড়জলের তাণ্ডব লক্ষ করা গিয়েছে বিজনোর, বরেলি, সাহরানপুর, পিলিভিট, ফিরোজাবাদ, চিত্রকূট, মুজফফরনগর, রায়বরেলি এবং উন্নাওতেও। নিহতর পাশাপাশি আহতের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। গো-বলয়ে মরুঝড়ের প্রকোপে আহত অন্তত ৮৩ জন।
ঝড়ে পাঞ্জাবেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়েছে প্রচুর শস্যসম্পদ। শিলাবৃষ্টিতে দানা মাণ্ডিতে রাখা কৃষকদের গম নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কৃষকরা ক্ষতিপূরণ ও ফসল সুরক্ষার সরঞ্জামের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে মান্ডিগুলি থেকে ফসল সরিয়ে নিয়ে যেতেও চাইছেন তাঁরা। ঝড়বৃষ্টির জেরে দিল্লিতে সর্বাধিক তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। ঝড়বৃষ্টির তাণ্ডব দেখা গিয়েছে দেশের আরও দুই রাজ্য অন্ধপ্রদেশে এবং ওড়িশায়। সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়েছে হায়দরাবাদ। দুই রাজ্য থেকেই কয়েকজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টুইট, “উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, পশ্চিবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশে গত কয়েকদিনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মৃত শতাধিক মানুষের পরিবার ও নিকট আত্মীয়দের শোক ও সমবেদনা জানাই।” আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)-র অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র বৃহস্পতিবার জানান, ভয়ঙ্কর এবং প্রাণঘাতী এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে দেশের কয়েকটি রাজ্যে দিন কয়েকের ব্যবধানে আছড়ে পড়তে চলেছে, সেই সংক্রান্ত সতর্কতা তাঁরা আগেই জারি করেছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.