সুব্রত বিশ্বাস: করোনা আতঙ্ক ও লকডাউনকে ঢাল করে ‘ব্যয় সংকোচ’-এর নামে কর্মীদের বেতন ও সুবিধায় চরম আঘাত আনতে চলেছে রেল। আতঙ্কের মাঝেও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কর্মীরা। লকডাউনের মধ্যে বসেই সার্কুলার জারি চলছে বিভিন্ন জোনে। খড়গপুর ডিভিশনের সব বিভাগ, কর্মী ও বিভিন্ন স্টেশনে যে অগ্রিম দেওয়া হয় তার পঞ্চাশ শতাংশ কমানো হয়েছে।
আগামী ২০ এপ্রিল থেকে কার্যকর করতে বলা হয়েছে এই নির্দেশ। যেমন মেডিক্যাল বিভাগকে ৩ লাখ ২৯ হাজার টাকা অগ্রিম নগদ দেওয়া হয়। তা কমিয়ে ১ লাখ ৬৪ হাজার করা হয়েছে। সমস্ত বিভাগ ও কর্মীদের ঘাড়ের উপর এই খাড়া নেমেছে। হাওড়ায় এই মুহূর্তে সার্কুলার না বেরোলেও ডিআরএম ইশাক খান জানান, এই পরিস্থিতিতে ‘ব্যয় সংকোচ’ হয়। এটাই আইন। ওয়েস্ট সেন্ট্রাল রেলের পদক্ষেপ আরও ভয়ানক। জানা গিয়েছে, আগামী ছ’মাসের জন্য তারা পে লেভেল অনুযায়ী ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেতন কাটবে। হলিডে ভাতা ২০২১ পর্যন্ত বাতিল। যাঁরা কাজে যাচ্ছেন না তাঁরা কোনও ট্রাভেল অ্যালাউন্স পাবেন না। কাজে যোগ দেওয়া কর্মীরাও টিএ অর্ধেক পাবেন। গ্রুপ ডি-তে নিয়োগ বন্ধ রাখবে। ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ অ্যালাউন্স কাটা হবে। কোচ, টয়লেট ক্লিনিংয়ে বাজেট কমিয়ে অর্ধেক করা হবে। লাইন বক্স ও বক্স বয় সরানো হবে। স্টেশনে ভিড় কমাতে একাধিক গেট বন্ধ হবে, বাড়ানো হবে চেকিং, জরিমানা করবে আরপিএফ। ইউটিএসে বেশি টিকিট বিক্রি বাড়াতে টিকিটে কমিশন থাকবে। ফুট ওভারব্রিজ ও প্ল্যাটফর্ম উঁচু করার কাজ আপাতত বন্ধ থাকবে। সন্তানদের শিক্ষার অনুদান বন্ধ অথবা কমানো হতে পারে। ইসিআরসি, পার্সেল পোর্টার, গার্ড পোস্ট তোলার কাজে পুনর্বিবেচনা হবে। ৫৫ বছর বয়স অথবা ৩৩ বছর কর্মজীবন হয়েছে এমন কর্মীদের স্বেচ্ছা অবসর কার্যকরের সিদ্ধান্ত। পূর্ব রেল এই মুহূর্তে এমন কোনও সার্কুলার জারি না করলেও কস্ট কাটিং করবে বলে জানা গিয়েছে।
পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ বলেন, “এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কর্মী সংগঠনগুলোর মত নিতে হয়। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করব। কারণ, একজন ট্রেনের ড্রাইভার যা বেতন পান তার থেকে অনেক বেশি টিএ পান। এজন্য বহু অসুবিধার সৃষ্টি হবে। অর্থমন্ত্রকের প্রস্তাব কার্যকর করতে চাইছে রেল। ধরে আনতে বললে বেঁধে আনছে। এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে। এদিকে লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আগামী সোমবার থেকে ৩৩ শতাংশ কর্মীকে কাজে যোগ দিতে বলেছে রেল। লাল সংকেত জারি অঞ্চলগুলিতে নির্দেশ কার্যকর না করার বোর্ডের নির্দেশ সত্ত্বেও সেখানে বসবাসকারীদের কাজে যোগ দিতে বলেছেন কর্তারা।”
মেনস ইউনিয়নের অমিত ঘোষ বলেন, “কলকাতা, হাওড়া হটস্পট এলাকা। অথচ ওই অঞ্চলের অফিস, ওয়ার্কশপে কর্মীদের কাজে যেতে মোবাইলে নির্দেশ দিচ্ছেন কর্তারা। না হলে বেতন কাটার কথাও বলা হচ্ছে। আমরা বোর্ড-সহ জিএমকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এটা মারণ ভাইরাস ছড়ানোর পরিকল্পনা। লাল সংকেত জারি অঞ্চলে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকবে না, তা হতেই পারে না। নির্দেশের বিরোধিতা করে তা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.