সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অসুস্থ বাবাকে দেখতে কাতার থেকে দৌড়ে এসেছিলেন ছেলে। কিন্তু সর্দি-কাশি হওয়ায় বাবাকে দেখতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। পরিবর্তে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছিল ছেলেকে। ইতিমধ্যে জীবনযুদ্ধে হার মানেন বাবা। তবে তা সত্ত্বেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত বাবাকে শেষ দেখা দেখতে পেলেন না ছেলে। পরিবর্তে ভিডিও কলেই বাবার শেষকৃত্য দেখলেন তিনি। কান্নাভেজা চোখে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন কেরলের যুবক।
বৃদ্ধ বাবা বিছানা থেকে মেঝেয় পড়ে যান। হৃদরোগে আক্রান্ত হন। খবর পাওয়ামাত্র নিজেকে আর সামলে রাখতে পারেননি ছেলে। তড়িঘড়ি গত ৮ মার্চ কাতার থেকে কেরলের কোট্টায়ামে ছুটে আসেন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য তাঁর বাবা হাসপাতালে ভরতি হয়ে গিয়েছেন। তাঁকে দেখতে হাসপাতালে দৌড়ে যান বছর তিরিশের লিনো আবেল। কিন্তু করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ছেলেকে বাবার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এদিকে, লিনো আবেলের সর্দি হওয়ায় করোনা সংক্রমণের সন্দেহে ওই হাসপাতালেই ভরতি হতে হয়। একই হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছেলে এবং বাবা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েন। ৯ মার্চ জীবনযুদ্ধে হার মানেন বাবা। ইহলোক ছেড়ে অমৃতলোকের পথে পাড়ি জমান তিনি।
হাসপাতালে শুয়ে সেই খবর কানে যায় ছেলের। বাবাকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শেষযাত্রায় বাবা এবং ছেলের মধ্যে দূরত্ব বাড়াল করোনা ভাইরাস। তাই বাবাকে শেষবারের মতো দেখতেও পাননি লিনো। একমাত্র সন্তান হওয়া সত্ত্বেও বাবার শেষকৃত্যে সশরীরে অংশ নিতে পারেননি। পরিবর্তে ভিডিও কলের মাধ্যমেই শেষকৃত্য দেখেন লিনো। হাসপাতালে শুয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের মানসিক অবস্থার কথা শেয়ার করেন লিনো আবেল। তিনি লেখেন, “শেষযাত্রায় বাবাকে দেখতে পারলাম না। খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সকলের ভালর জন্য যদি কিছু করতে হয়, তাহলে আমি স্বার্থত্যাগ করতেই পারি। তাই তো হাসপাতালে কোয়েরেন্টাইনে রয়েছি। ভিডিও কলের মাধ্যমেই বাবার শেষকৃত্য দেখলাম।”
লিনো আবেলের এই ফেসবুক পোস্ট মন ছুঁয়েছে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নেরও। সমাজের কথা ভেবে যে লিনো স্বার্থত্যাগও করতে পারেন, তা জানতে পেরে ওই যুবকের প্রশংসা করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বাবাকে দেখতে কাতার থেকে ফিরলেও দেখা হল না। বাবার শেষকৃত্যেও অংশ নিতে পারলেন না যুবক। সত্যিই খুব দুঃখজনক ঘটনা। তবে সমাজের আর পাঁচজনের কথা ভেবে লিনো যে হাসপাতালে রয়েছেন, তা শুনেই ভাল লাগছে। এভাবে সকলেই যদি সচেতন হন, তবে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না।” হাসপাতাল সূত্রে খবর, আপাতত সর্দি সেরে গিয়েছে লিনোর। তাঁর রক্ত পরীক্ষাতেও মেলেনি করোনা সংক্রমণের চিহ্ন। খুব তাড়াতাড়ি তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেই আশা চিকিৎসকদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.