সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দু’দিন আগেই শপথ নিয়েছে নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভা। দপ্তর বণ্টনের পর মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক। তাঁর ডেপুটি সঞ্জয় শ্যামরাও ধোতরে। শুক্রবার দায়িত্ব গ্রহণের পরই তাঁদের কাছে খসড়া শিক্ষানীতি পেশ করলেন ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি-র চেয়ারম্যান তথা ইসরো-র প্রাক্তন প্রধান ডঃ কৃষ্ণস্বামী কস্তুরীরঙ্গন। মোটামুটি ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ বদলের সুপারিশ করেছে খসড়া কমিটি। আর তারপর থেকেই হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ শুরু হয়ে গিয়েছে তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের কয়েকটি রাজ্যে৷ #StopHindiImposition এবং #TNAgainstHindiImposition নামে টুইটারে রীতিমতো ট্রেন্ডিং হয়ে গিয়েছে। শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এক লক্ষ টুইট-রিটুইট হয়েছে।
প্রতিবাদের মূল বক্তব্য, স্কুলে হিন্দিকে কোনও মতেই তৃতীয় ভাষা হিসাবে বাধ্যতামূলক করা চলবে না। এই প্রতিবাদের মুখ হয়ে উঠেছেন তামিলনাড়ুর রাজনীতিবিদরা। কারণ, রাজ্যে এই বিষয়টি বহুদিন ধরেই অত্যন্ত স্পর্শকাতর। খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ১৯৬৮ থেকেই বহু স্কুলে ‘থ্রি ল্যাঙ্গুয়েজ ফরমুলা’ চলে আসছে। তা চালিয়ে যাওয়া উচিত। প্রাথমিক স্তর থেকে শিশুরা তিনটি ভাষাতেই সড়গড় হয়ে উঠবে। অহিন্দিভাষী রাজ্যে স্থানীয় ভাষা, ইংরেজির সঙ্গে হিন্দি শিখতে হবে। হিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি, ইংরেজির সঙ্গে অন্য কোনও ভারতীয় ভাষা শেখার প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি। এই প্রস্তাব আদতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার চেষ্টা বলে মনে করছে বহু মানুষ।
সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে প্রতিবাদ আছড়ে পড়ছে। বিজেপির মুখোশ খুলে পড়েছে বলে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম, ডিএমকে সুপ্রিমো এম কে স্ট্যালিন। অহিন্দিভাষী রাজ্যে হিন্দি চাপিয়ে দিলে দেশে বিভাজন তৈরি হবে বলে মন্তব্য করেছেন স্ট্যালিন। তামিলনাড়ুর স্কুলশিক্ষামন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই নীতি তাঁরা মানবেন না। রাজ্য ‘টু’ল্যাঙ্গুয়েজ” নীতি চালিয়ে যাবে। তবে শনিবার রাতেই মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব আর সুব্রহ্মণ্যম একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছেন, এটি খসড়া প্রস্তাব। সরকার কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সাধারণ মানুষ ও রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে পরামর্শ করবে। নরেন্দ্র মোদির সরকার সমস্ত ভারতীয় ভাষার সমান উন্নতি ও বিকাশের প্রতি দায়বদ্ধ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হবে না, কোনও ভাষাকে বঞ্চিতও করা হবে না।
এই বিতর্ক নিয়ে অভিনেতা কমল হাসান বলেছেন, “আমি তো হিন্দি ছবি করেছি। কিন্তু জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।” স্বাধীনতার পূর্বে ১৯৩৭, পরে ১৯৬৫-তে হিন্দিবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল তামিলনাড়ু। বর্তমান জাতীয় শিক্ষানীতি ১৯৮৬ সালে তৈরি হয়েছিল। পরে ১৯৯২-এ তা সংশোধন করা হয়। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে নতুন নীতি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। সেই মতো কস্তুরীরঙ্গনের নেতৃত্বে কমিটি তৈরি হয়। কমিটির সুপারিশে মোট ১৯টি বদলের কথা বলা হয়েছে। প্রথমত, মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের বদলে শিক্ষামন্ত্রক করার প্রস্তাব এসেছে।
স্কুলশিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে প্রাথমিক শৈশব যত্ন এবং শিক্ষা, সঙ্গে পাঠ্যক্রম এবং শিক্ষাগত কাঠামোর পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইন তিন বছর থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত সম্প্রসারিত এবং ৫+৩+৩+৪ স্তরে পুনর্বিন্যাসের কথা বলেছে। স্কুলে পাঠ্যক্রমের বোঝা কমাতে হবে। পাঠ্যক্রম, সহ পাঠ্যক্রম বা অতিরিক্ত পাঠ্যক্রমের বিভাজন থাকবে না। কলা, সংগীত, যোগশিক্ষা, সবই মূল পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হবে। নিম্নমানের শিক্ষক শিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ করার ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে। শিক্ষক শিক্ষণকে নামী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষকতার চাকরিতে চার বছরের নির্দিষ্ট পাঠ্যসূচির বিএড সর্বনিম্ন যোগ্যতার মাপকাঠি হিসাবে গণ্য হবে।
পাশাপাশি, উচ্চশিক্ষা এবং স্নাতক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও রদবদলের প্রস্তাব আনা হয়েছে। একটি নতুন শীর্ষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা জাতীয় শিক্ষা আয়োগ তৈরির কথা বলা হয়েছে। যারা সমস্ত শিক্ষাগত উদ্যোগ এবং কর্মসূচির সার্বিক এবং সমষ্টিগত বাস্তবায়ন, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করবে। গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি এবং উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরির প্রস্তাবও করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান পর্যালোচনা, তহবিল, অনুমোদন এবং ব্যবস্থাপনা চারটি আলাদা স্বাধীন সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হবে বলে প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি। সমস্ত সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সমদৃষ্টিতে দেখা হবে। শিক্ষাকে ব্যবসা বা লাভজনক পেশা হিসাবে দেখা যাবে না। ভারতের প্রাচীন ভাষাশিক্ষায় জোর দিতে হবে। পালি, পারসি ও প্রাকৃত শিক্ষার জন্য তিনটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.