সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশব্যাপী ধর্মঘটে ব্যাহত চিকিৎসা পরিষেবা। বুধবার সকাল থেকে রাজ্যের কোনও সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে ছিলেন না কোনও চিকিৎসক। তবে বেলা গড়াতে কয়েকটি হাসপাতালে পরিষেবা চালু হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন বিলের প্রতিবাদে আজ দেশজুড়ে ধর্মঘট পালন করছেন চিকিৎসকরা। যাতে সমর্থন জানিয়েছে এ রাজ্যের চিকিৎসকদের সাত সংগঠন। আর এই কারণেই বহরমপুর, শিলিগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ থেকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম; সর্বত্র একই ছবি। এর ফলে ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। দূর দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
বুধবার সকাল থেকেই লম্বা লাইন রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালে। যদিও প্রতিটি হাসপাতালে জরুরি পরিষেবা চালু রয়েছে। অভিযোগ, হাসপাতালের তরফে টিকিট দেওয়া হলেও আউটডোরে আসেননি ডাক্তাররা। রোগীদের বক্তব্য, মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত আউটডোরে ডাক্তার দেখানোর জন্য লাইন দেন তাঁরা। কিন্তু ধর্মঘটের জন্য আজ অমিল চিকিৎসক। তাই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালের গেট বন্ধ করে দেন চিকিৎসকরা। এই নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা ছড়ায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। তবে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে।
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজ্যসভার সাংসদ ডা. শান্তনু সেন জানান, বুধবার সকাল ছ’টা থেকে টানা চব্বিশ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। সারা দেশের মতো এ রাজ্যেরও সমস্ত সরকারি হাসপাতালে জরুরি বিভাগ ব্যতীত অন্যান্য বিভাগ বন্ধ থাকবে। তাঁর কথায়, “বিজেপি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দিতে চাইছে। এনএমসি বিল গণতন্ত্র বিরোধী। এই বিলের মাধ্যমে রাজ্যের ক্ষমতাকে খর্ব করা হচ্ছে। মেডিক্যাল এডুকেশনকে কর্পোরেট সেক্টরের হাতে বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। তা আমরা হতে দেব না।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, এই বিলে পরোক্ষে হাতুড়ে ডাক্তারদের প্র্যাকটিসকে মান্যতা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দেশকে ভাগ করতে চাইছে এই সরকার। বিলে লাগু হলে গরিব মানুষ ডাক্তার হতে পারবে না। গ্রামের মানুষকে হাতুড়ে ডাক্তারদের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। কম্পাউন্ডার, ল্যাব টেকনিশিয়ান রক্ত সংগ্রাহকরা ডাক্তার নন। তাঁদের লাইসেন্স দেওয়া হবে এই বিলে। তাঁরাই গ্রামে গিয়ে চিকিৎসা করবেন। আর শহরের আর্থিকভাবে সচ্ছ্বলরা এমবিবিএস ডাক্তার দেখাবেন। এটা একধরনের দ্বিচারিতা।
আইএমএ’র এই ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়েছেন সার্ভিস ডক্টরস ফোরাম। তবে এখনই ধর্মঘটের পথে না হাঁটলেও আইএমএ’র আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তারদের পক্ষ থেকে ডা. অর্চিষ্মান ভট্টাচার্য বলেন, এই আইন দানবীয়, জনবিরোধী, চিকিৎসক বিরোধী ও সর্বোপরি সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। বড়লোকদের কথা ভেবেই এই আইন তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সমস্ত জুনিয়র ডাক্তাররা এনএমসি বিলের বিরুদ্ধেই রয়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, “সরকারি হাসপাতালের আউটডোরের সিংহভাগ রোগী আমাদের উপর নির্ভর করে থাকে। অনেকেই তাঁরা এ ধর্মঘটের কথা জানেন না। আচমকা কাল ধর্মঘটে গেলে তারা অসুবিধেয় পড়তে পারেন।” তাঁদের কথা ভেবেই আপাতত রোগী দেখা বন্ধ রাখবেন না জুনিয়ররা। কিন্তু তা সত্ত্বেও আউটডোর বুধবার সকাল থেকেই বন্ধ।
চিকিৎসকদের আশঙ্কা এই বিল আইনে পরিণত হলে, কেন্দ্রের ঠিক করে দেওয়া ২০ সদস্যের কমিশনই হবে মেডিক্যাল শিক্ষার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক। এছাড়াও ডাক্তারির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা, মেডিক্যাল কলেজগুলির অনুমোদন, ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত বর্তমান নিয়মেও আমূল পরিবর্তন করা হবে। বিরোধী বিক্ষোভের মধ্যেই সোমবার লোকসভায় পাস হয়েছে এনএমসি বিল। উল্লেখ্য সোমবারই এইমসের হাজার পাঁচেক চিকিৎসক এই বিলের বিরোধিতায় মিছিল করলে পুলিশ তা আটকে দেয়। আটক করা হয় বহু চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীকে। তার মধ্যে ছিলেন আইএমএ’র খোদ সর্বভারতীয় সভাপতি শান্তনু সেনও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.