সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘ঘনাদা’ থেকে হার্জের ‘টিনটিন’ অথবা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কাকাবাবু’। এতদিন গল্পের চরিত্রদের মুখে তুষারমানব ইয়েতি সম্পর্কে নানা কথা শোনা গেলেও আচমকা মিলল তার খোঁজ! ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি পর্বতারোহী দল গত ৯ এপ্রিল নেপাল-চিন সীমান্তের কাছে প্রথম তার পায়ের ছাপ দেখতে পায়। পরে টুইটারে সেই ছবি পোস্ট করে সেটি ইয়েতির বলে দাবিও করে। মঙ্গলবার এই খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই ফের শুরু হয় রহস্যময় এই প্রাণীটির অস্তিত্ব নিয়ে আলোচনা। সাধারণ মানুষ থেকে পর্বতারোহী, সবাই উদগ্রীব হয়ে ওঠেন এই সম্পর্কে আরও খবর জানতে।
ইতিহাস বইয়ের পাতা উলটে জানা যায়, ইয়েতি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছিল ১৮৩২ সালে। ওই বছর জেমস প্রিন্সেপের সম্পাদনায় ‘জার্নাল অফ দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি অফ বেঙ্গল’-এ বিখ্যাত পর্বতারোহী বি এইচ হাডসনের উত্তর নেপাল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রকাশ পেয়েছিল। তাতে হাডসন লিখেছিলেন, তাঁর সঙ্গী গাইডদের সামনে পড়ে একটি লম্বা, দু’পেয়ে, লোমশ প্রাণী ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিল, যাকে দেখে তাঁর ওরাংওটাং বলে মনে হয়েছিল।
১৮৯৯ সালে লরেন্স অস্টিন ওয়াডেল-এর ‘অ্যামং দ্য হিমালয়াস’-এ প্রথমবার প্রাণীটির পায়ের ছাপের বিবরণ নথিভুক্ত হয়। ওয়াডেল-এর গাইডরা একে পাহাড়ের বাসিন্দা দু’পেয়ে বনমানুষের পায়ের ছাপ বলে দাবি করেছিলেন। কিন্তু ওয়াডেল জানান, বনমানুষ নয়, এগুলো কোনও ভালুকের পায়ের ছাপ।
১৯২৫ সালে রয়েল জিওগ্রাফিকাল সোসাইটি-র সদস্য ও ফোটোগ্রাফার এন এ টমবাজি উত্তর সিকিমের জেমু হিমবাহের কাছে একটি বিশেষ প্রাণীকে দেখেন। তাঁর বিবরণ অনুযায়ী, প্রাণীটি ছিল বাইরে থেকে মানুষের মতো দেখতে। কিন্তু, তার গায়ে কোনও পোশাক ছিল না। ওই প্রাণীটি চলে যাওয়ার পর টমবাজি ও তাঁর গাইডরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তার পায়ের ছাপ দেখতে পান। যা ছিল মানুষের মতোই, তবে একটু বড়৷ ছ-সাত ইঞ্চি লম্বা আর চার ইঞ্চি চওড়া। ১৯৪৮ সালে ওই একই জায়গায়, রয়েল এয়ার ফোর্সের কাজ থেকে ছুটি নিয়ে ট্রেকিং যাওয়া পিটার বিয়ার্ন রহস্যময় পায়ের ছাপ দেখেন।
১৯৫১ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ পর্বতারোহী এরিক শিপটন মাউন্ট এভারেস্ট অভিযান করেছিলেন। প্রায় ২০,০০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছানোর পর তিনি বরফের বুকে এক সারি পায়ের ছাপ দেখতে পান। সেগুলোর ফটো তুলে পরে সবাইকে এনে তা দেখিয়ে ছিলেন তিনি।
এপ্রসঙ্গে বিখ্যাত পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত বলেন, “১৯৫৩ সালে স্যার এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে এভারেস্ট অভিযানের সময় এই ধরনের বেশ কিছু পায়ের ছাপ দেখেছিলেন। হিলারি প্রথম থেকেই ইয়েতির অস্তিত্বে সন্দেহ প্রকাশ করলেও তেনজিং তা ইয়েতি বলেই বিশ্বাস করেছিলেন। পাশাপাশি তাঁর বাবা দু’বার ইয়েতি দেখেছিলেন বলে দাবিও করেন নোরগে। এরপর ১৯৬০ সালে ইয়েতির সন্ধানে ফের একটি অভিযান চালান হিলারি। নেপালের খুমিয়াং মনাস্ট্রি থেকে একটি প্রাণীর মাথার খুলি এবং কিছু লোমও সংগ্রহ করেন। তা পরীক্ষা করে জানা যায় যে সেটি এক ধরনের হিমালয়ে বসবাসকারী হরিণের দেহাংশ। পরে তেনজিং-ও স্বীকার করে যে ইয়েতির সম্পর্কে তিনি যা বলেছিলেন তা ঠিক নয়।’’
এরপর সত্যরূপ জানান, এখন ভারতীয় সেনার পক্ষ থেকে যা দাবি করা হচ্ছে তা যদি সত্যি হয়, তবে তো কথাই নেই৷ কিন্তু বিজ্ঞানসম্মতভাবে এটা প্রমাণ করতে গেলে আরও গভীর পর্যবেক্ষণের প্রয়োজন। তাই যেখানে এই পায়ের ছাপ দেখা গিয়েছে, তার আশপাশে ক্যামেরা লাগানো হলে প্রমাণ পেতে সুবিধা হবে বলে তিনি মনে করছেন৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.