নন্দিতা রায়ঃ জরির পাড় দেওয়া দক্ষিণী স্টাইলে পরা সাদা সিল্কের ধুতি, গায়ে সিল্কের সাদা শার্ট। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে বেঙ্গালুরুর ‘বিধানসৌধ’ ভবনের অন্দরে প্রবেশের ঠিক সামনেই দাঁড়ানো ভদ্রলোককে দেখে অনেকটা বরকর্তা বরকর্তা মনে হচ্ছিল। একের পর কংগ্রেস বিধায়ক বিধানসভার কক্ষে প্রবেশ করছেন, তাঁদের স্বাগত জানাচ্ছেন তিনি। শনিবার সকাল থেকে প্রায় পলাতক কংগ্রেস বিধায়ক অনন্ত কুমার আসতেই সেই ভদ্রলোকের মুখের হাসি চওড়া হল। এগিয়ে গিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। অনেকটা দূরে সংবাদমাধ্যমের জন্য বরাদ্দ জায়গায় দাঁড়িয়ে বাইরে থেকে আসা সাংবাদিকদের তাঁকে চেনার কথা নয়। পাশে দাঁড়ানো এক কন্নড় সাংবাদিককে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, উনি ডি কে শিবকুমার। সঙ্গে অতি উৎসাহের সঙ্গে জানালেন, আজকের দিনের জন্য উনিই তো ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’। কংগ্রেস সরকার গড়লে বড় পদের অন্যতম দাবিদার ইনি।
[ সোমবারের বদলে বুধবার, শপথগ্রহণের দিন পরিবর্তন করলেন কুমারস্বামী ]
সূত্রের খবর, উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার প্রবল সম্ভবনা রয়েছে দাক্ষিণাত্যের এই ধনকুবের-এর। তাও যদি না হয়, মানে উপমুখ্যমন্ত্রী অন্য কেউ হলে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ পেতে পারেন তিনি। ফলে তাঁর উপর নির্ভর করেই ২০১৯-এ লোকসভার নির্বাচনে ময়দানে নামবে কর্ণাটক কংগ্রেস। ডিকে শিবকুমার, নামটা অবশ্য বহু আগে থেকেই রাজনৈতিকমহলে পরিচিত। প্রথমত কনকপুর কেন্দ্রের কংগ্রেসের বিধায়ক। দ্বিতীয়ত, সর্বদাই বিপদের সময়ে কংগ্রেসের ত্রাতা। সেটা আহমেদ প্যাটেলের রাজ্যসভা ভোটে জয়লাভের সময়ই হোক বা কর্নাটকে কংগ্রেসের ঘর বাঁচানো। সর্বদাই কংগ্রেসকে ‘ঘোড়া কেনাবেচার’ আশঙ্কা থেকে মোক্ষ লাভ করিয়েছেন ডাকাবুকো এই ভোক্কালিগা নেতা।
শোনা যায়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলা এইচ ডি কুমারস্বামীর সঙ্গে তাঁর নাকি ‘আদায় কাঁচকলায়’ সম্পর্ক। অথচ, কংগ্রেসের ঘর সামলে কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রীর কুরসির দিকে পুরোটাই এগিয়ে দিলেন তিনি। এই নেতার উপরেই কর্নাটকের কংগ্রেস বিধায়কদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী। আর তিনি যে সে কাজে পুরোপুরি সফল তার প্রমাণ এদিন বিধানসভায় কংগ্রেস বিধায়কদের ১০০ শতাংশ হাজিরা। ইগলটন রিসর্ট থেকে নিরাপত্তা সরিয়ে নেওয়ার পরেই শিবকুমার কংগ্রেস বিধায়কদের বাসে চাপিয়ে হায়দরাবাদ রওনা করিয়ে দিয়েছিলেন। নিজে বসেছিলেন বাসের একেবারে সামনে, চালকের পাশের আসনে। অথচ শনিবার সকাল থেকেই দলের দুই বিধায়ক বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়েছিল। খবরটা সঠিকই ছিল। তবে, তা প্রকাশ হওয়ার অনেক আগেই সবকিছু সামলে ফেলেছিলেন করিতকর্মা শিবকুমার। শনিবার সকালেই তিনি কংগ্রেস বিধায়ক অনন্ত সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে যা বোঝানোর বুঝিয়ে এসেছিলেন৷ সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন অনন্ত কুমারের স্ত্রীও। বৈঠকের ভিডিও ফুটেজ কন্নড় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মোবাইলে ঘুরছিল দুপুরের আগে থেকেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.