বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের কাছে মুখ পুড়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের। সদস্য সংগ্রহ অভিযানে কার্যত ডাহা ফেল প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব, যার মাথায় রয়েছেন অধীর চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury)। যখন অন্য সব রাজ্য যোগ্যতা প্রমাণে তেড়ে-ফুঁড়ে নেমেছে, তখন বঙ্গ কংগ্রেসের (Bengal Congress) হাল দেখে মাথায় হাত হাইকম্যান্ডের।
বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি অধীররা। এক লক্ষ সদস্য সংগ্রহ করতে ব্যর্থ বিধান ভবন। ফলে সমালোচিত হলেন প্রদেশ সভাপতি। তাঁর সভাপতি পদ হারানোর সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে, তাঁকে সর্বোচ্চ নেতৃত্ব তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বলে সূত্রের খবর।
২০২৪-এর লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে এক মাস ধরে দেশজুড়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমেছিল AICC। অনলাইন ও অফলাইনে সদস্য সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্য শাখাগুলিকে। পয়লা বৈশাখ ছিল সদস্য সংগ্রহের শেষ দিন। গান্ধী পরিবারের কাছে যোগ্যতা প্রমাণে বিপুল সংখ্যক সদস্য জোগাড় করার দৌড়ে ঝাঁপ দেয় বিভিন্ন রাজ্যের প্রদেশ নেতৃত্ব। দেশজুড়ে সদস্য সংগ্রহ অভিযানে নেমে শুধুমাত্র অনলাইনে প্রায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ সদস্য সংগ্রহ হয়েছে বলে সম্প্রতি জানান রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। বঙ্গ কংগ্রেস বাদে সব রাজ্য ইউনিট ন্যূনতম কুড়ি লক্ষ সদস্য সংগ্রহ করেছে বলে জানা গিয়েছে।
এআইসিসির সদস্য সংগ্রহের নিয়মানুযায়ী প্রত্যেক রাজ্যের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়। যে রাজ্যে বুথ সংখ্যা যত, তার অর্ধেক বুথে ন্যূনতম ২৫ জন সদস্য করা বাধ্যতামূলক ছিল। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে এখন বুথ সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। AICC-র লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে এরাজ্যে ন্যূনতম ১০ লক্ষ সদস্য করতে হত।
বিধান ভবন সূত্রে খবর, সেই লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি প্রদেশ কংগ্রেস। শেষ দিন পর্যন্ত মাত্র ৬০ হাজার সদস্য সংগ্রহ হয়েছে। আগে সদস্য সংগ্রহ অভিযান শুরু হলে প্রদেশ সভাপতি জেলা নেতৃত্বকে লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিতেন। তেমনভাবেই প্রদেশ ও গণ সংগঠনের সদস্যদেরকেও ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হত। এবার তেমন কিছুই হয়নি। বেশিরভাগ জেলা নেতৃত্বই সদস্য সংগ্রহের নির্দেশ পাননি বলে অভিযোগ।
সারাদিন কলকাতায় বসে থাকলেও সদস্য সংগ্রহ অভিযানে একাধিক হেভিওয়েট নেতাকে যুক্ত করা হয়নি। প্রদেশ সভাপতির একগুঁয়েমি আচরণের জন্যই তাঁরা সদস্য সংগ্রহ অভিযান এড়িয়ে চলেছেন বলে জানিয়েছেন রাজ্যের এক সহ-সভাপতি। আবার রাজ্যের AICC নিযুক্ত পর্যবেক্ষক সাংসদ চেল্লা কুমারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বছরখানেক আগে তিনি বঙ্গের দায়িত্ব পেলেও এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মাত্র একবার পা রেখেছেন। সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলাকালীন তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি।
বঙ্গ কংগ্রেসের এমন করুণ হাল দেখে কেন এই পরিস্থিতি, জানতে অধীর চৌধুরীর সঙ্গে একদফায় সোনিয়া ও রাহুল গান্ধী আলোচনা করেন বলে জানা গিয়েছে। একদিকে সংসদ, অন্যদিকে রাজ্যের দায়িত্ব সামলাতে সমস্যা হচ্ছে কিনা, সোনিয়া অধীরের কাছ থেকে জানতে চান। তাঁকে দু’দিক সামলাতে সমস্যা হলে কোনও একটি দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, নয়তো আগামী তিন মাসের মধ্যে যোগ্যতা প্রমাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে অধীরকে প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।
এছাড়াও, আগামী মাস থেকে ধাপে ধাপে সব রাজ্যের নেতৃত্বের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করার কথা সোনিয়া, রাহুলের। সেখানেই তাঁরা ক্ষমতাসীন ও বিরোধী গোষ্ঠীর নেতৃত্বের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলবেন বলে এআইসিসি সূত্রের খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.