সৌরভ দত্ত, রায়বরেলি: ১২ মে, ষষ্ঠ দফায় ভোট আজমগড়ে। সপার গড়ে বিজেপির হয়ে লড়ছেন ভোজপুরী সুপারস্টার ‘নিরহুয়া’৷ প্রার্থী হওয়ার পর পরই স্টুডিও ছেড়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ভোটের ময়দানে। এটা অবশ্য তাঁর ভাল নাম নয়। নিরহুয়ার ভাল নাম দীনেশলাল যাদব। কিন্তু সে নাম কি আর কেউ মনে রেখেছে? মুখে মুখে তিনি আট থেকে আশির ‘নিরহুয়া’।
একজন রিকশাওয়ালার চরিত্রে অভিনয় করে সেলুলয়েডের কোনও নায়কের এমন বেনজির ‘পপুলারিটি’র নজির বোধহয় সারা দেশে আর নেই। ছবির নাম ‘নিরহুয়া রিকশাওয়ালা’। এই ছবিতেই নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন দীনেশ। আর তারপরই তিনি বনে যান ভোজপুরী ছবির মহাতারকা। তাঁর জনপ্রিয়তার কথা মাথায় রেখে ছবিটির তিন-তিনটি সিক্যুয়েল পর্যন্ত বানিয়ে ফেলেছেন নির্মাতা-নির্দেশকরা। কিন্তু ‘নিরহুয়া’র জনপ্রিয়তা বেড়েছে বই কমেনি। তো সেই ‘নিরহুয়া’ এবার বিজেপির টিকিটে প্রথম ভোটের ময়দানে। আর প্রথমবারই আজমগড়ে হেভিওয়েট অখিলেশ যাদবের মুখোমুখি।
আজমগড়ে তো দীনেশলাল নিজেই প্রার্থী, প্রচারের আলো বেশ খানিকটা কেড়েছেন৷ কিন্তু যে কেন্দ্রে লড়াইয়ে না থেকেও শুধুমাত্র প্রচারেই ঝড় তুলেছেন ভোজপুরী সুপারস্টার, সে দুু’টি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় কেন্দ্র – আমেঠি ও রায়বরেলি৷ সেখানকার প্রচারে রীতিমতো কামাল করে গিয়েছিলেন ‘নিরহুয়া’। পঞ্চম দফায় ভোট হয়েছে আমেঠি ও রায়বরেলিতে।আর তার প্রাক্কালেই লোনের সূচিতে যখন সেদিন দুপুরে ‘নিরহুয়া’র কপ্টার নেমেছিল, তখন চারপাশের থিকথিকে ভিড় দেখে কেউ বলবে তাপমাত্রা না যে ৪০ ডিগ্রি ছুঁইছুঁ! হেলিপ্যাড থেকে মঞ্চ বড়জোড় কয়েক মিটার। জনতার ভিড় আর ফুলের বৃষ্টিতে সেটুকু পেরোতেই সময় কেটে গেল বেশ কয়েক মিনিট। তারপর যখন মঞ্চে সভা, তখন ভাষণ হেলায় দূরে ঠেলে ‘নিরহুয়া’কে দেখতেই হুড়োহুড়ি। ঘনঘন সেলফির আবদার। ফুলমালা দিতে রীতিমতো লাইন। ভাষণ দিতে শুরু করেও ‘সিরিয়াস’ আর থাকতে পারলেন না দীনেশলাল। জনতার আবদারে ‘নিরহুয়া’কে ভোজপুরী সংলাপের মতো করে পেশ করতে হল নির্বাচনী ভাষণ। শোনাতে হল গানও। সালোন ছেড়ে যখন তিনি আরও দূরে তখনও তাঁকে ঘিরে সেই একই জনজোয়ার। ভোটের ফল যাই হোক জনপ্রিয়তার নিরিখে ভোটের বাজারে ‘নিরহুয়া’ নিঃসন্দেহে রেখে গেলেন নয়া মাইলস্টোন।
[আরও পড়ুন : ‘কোচ আডবানীর মুখে ঘুসি মেরেছেন বক্সার মোদি’, তীব্র কটাক্ষ রাহুলের ]
আরেকজনের কথা উল্লেখ করা জরুরি। একজন গাঁয়ের চাষি। ট্যাঁকের জোর না থাক, তাঁর আবেগ দুর্বার। নিরহুয়া যখন রীতিমতো ‘সুপারস্টার’। মুখে মুখে তাঁর নাম ঘুরছে। ইনিও কম যান না। আনোখিলাল। প্রায় মাসখানেকের ভোটপর্বে হাই-প্রোফাইল রায়বরেলি ও আমেঠিতে তারকা নেহাত কম আসেননি। কিন্তু তাঁদের কার্যত হেলায় দূরে ঠেলে নজর কেড়েছেন এই দু’জন। সেই নিরিখে আনোখিলাল আর দীনেশলাল-দুই মেরুর এই দু’জনই জোড়া এই কেন্দ্রে ভোটের আসলি ‘হিরো’। পরনে খদ্দরের সাদা পাজামা-কুর্তা। রোদে পুড়ে কালচে মেরে যাওয়া মুখে ইয়া বড় গোঁফ। মাথায় সাদা টুপি চড়িয়ে দু’হাতে ধরা কংগ্রেসের ঝান্ডা নেড়ে চলেছেন অবিরাম। ঠিক এমনই প্রোফাইল গুয়ারপানা গাঁয়ের চাষি আনোখিলাল তিওয়ারির। প্রথম দেখা লালগঞ্জের সভায়। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী যখন জনতার মাঝে, তখন একাই ঝান্ডা নেড়ে চলেছিলেন আনোখিলাল। তারপর কী আশ্চর্য ভোজপুর থেকে সারেনি, পরদিন হরদাসপুর থেকে মহারাজগঞ্জ। এমনকী, তিলইতেও দিব্যি হাজির আনোখিলাল!
ভোটের আগে রায়বরেলি শহর থেকে দূরে যে অতিথিশালায় উঠেছিলেন সোনিয়া আর প্রিয়াঙ্কা, তার গেটেও নিরাপত্তারক্ষীদের ঘেরাটোপ এড়িয়ে মাঝেমাঝেই ঝান্ডা নেড়ে নিজেকে মেলে ধরছিলেন এই চাষিবাসি গেরস্ত। “লাগাতার এভাবে ছুটে বেড়াচ্ছেন কেন?” আনোখিলালের জবাব, “সোনিয়াজি, প্রিয়াঙ্কাজি আর রাহুলজির সভা মানে তো আমি যাবই। এটা নতুন নয়, কবে থেকেই তো করছি৷ আর এবার তো বিজেপি সরকার উলটে কংগ্রেসের সরকার আনতেই হবে। তাই গ্রাম থেকে এসে ছুটে চলেছি একাই।” গাড়ি নেই, ঘোড়া নেই সঙ্গে গুটিকয় মানুষ কখনও আছেন বা নেই। কিন্তু আনোখিলালের উদ্যম অটুট। পঞ্চম দফা ভোটের আগে শনিবার শেষ বিকেলে যখন প্রচার শেষের ঘণ্টা পড়ল, তখনও আমেঠি লাগোয়া গৌরিগঞ্জে ঝান্ডা নেড়ে চললেন আনোখিলাল। ধন্য বটে সমর্থক!
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.