চিনকে চাপে রাখতে বদ্ধপরিকর ভারত!
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ফের চাপা উত্তেজনা ভারত-চিন সম্পর্কে৷ ভারত-পাক প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো উত্তেজনা না হলেও বেজিংয়ের সঙ্গে উত্তেজনাটা বেশ কিছুটা কূটনৈতিক, কিছুটা সামরিকও৷ দু’ দিন আগে লাদাখে যখন চিনা সেনাদের হুমকি উপেক্ষা করে সেচখাল নির্মাণ সম্পূর্ণ করলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়াররা, তখনই চিন কূটনৈতিক চাপ বজায় রেখে জানাল, পরমাণু এলিট ক্লাব এনএসজি-র সদস্য হওয়ার জন্য ভারতের দাবিকে তারা সমর্থন করছে না৷ এ ব্যাপারে তাদের পুরনো অবস্থান থেকে তারা সরবে না৷ তাই থেমে নেই নয়াদিল্লিও৷ চিন বিরোধী অক্ষের শরিক হিসাবে ভারত জাপান, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের সঙ্গে আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে চলেছে৷ সেখানে চিনকে চাপে রাখার জন্য বলা হবে, বিবদমান দক্ষিণ চিন সাগর এলাকা আন্তর্জাতিক জলসীমার মধ্যে পড়ে৷ সেখানে চিনের একতরফা আধিপত্য ও নির্মাণকাজ পুরোপুরি বেআইনি৷ দক্ষিণ চিন সাগরের বিবদমান এলাকার আকাশসীমাও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র৷ সেখানে চিন কোনওভাবেই নো এন্ট্রি জারি রাখতে পারে না৷ এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়কে চিন মেনে চলতে বাধ্য৷
বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, চিনকে পাল্টা চাপে রাখতে দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে ভারত সক্রিয় অবস্থান নিতে চলেছে৷ শুধু তাই নয়, পরমাণু প্রযুক্তি ও জ্বালানি সরবরাহকারী গোষ্ঠী নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপে (এনএসজি) ভারতের প্রবেশের দাবিকে আগের মতোই গুরুত্ব দিতে রাজি নয় চিন৷ তাই চিনের ঐতিহাসিক শত্রু জাপানের সঙ্গে ভারত অসামরিক পরমাণু চুক্তি করতে চলেছে৷ কিনতে চলেছে বেশ কিছু আধুনিক যুদ্ধবিমানও৷ এজন্য যুদ্ধবিমানগুলির দাম কমাতেও রাজি হয়েছে জাপান৷
ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের মতে, এনএসজি নিয়ে চিনের বাড়াবাড়ি, পাক জঙ্গি নেতা মাসুদ আজহারকে কূটনৈতিক রক্ষাকবচ দিয়ে আড়াল করার চেষ্টা, পাকিস্তানের সঙ্গে আর্থিক করিডর নির্মাণ এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক আঁতাত-সহ ভারত বিরোধিতা জারি রাখার মোক্ষম জবাব দেওয়া দরকার৷ এই চিনা আধিপত্য খর্ব করার দরকারটা শুধু ভারতের নয়, দরকারটা আরও বেশি করে জাপান, ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরের৷ আর্থিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক দিক দিয়ে সম্মিলিতভাবে চিনা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে চায় পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি৷ তাই জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের আগ্রহে ভারতের সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ আবের এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে জাপানের পার্লামেন্টও৷ এভাবেই জাপান চিনকে কড়া বার্তা দিয়েছে যে, ভারতের পরমাণু বিশ্বাসযোগ্যতা এতটাই সুদৃঢ় এবং ভারতের পরমাণু কর্মসূচি এতটাই সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ যে তা যে কোনও প্রশ্নের ঊর্ধ্বে৷ তাই এনএসজি-তে ভারতের প্রবেশকে জাপান সমর্থন করছে এবং বেজিং কী বলছে তা গুরুত্ব দিতে নারাজ টোকিও৷
ভারতীয় কূটনীতিকদের ব্যাখ্যা, আমেরিকার পর জাপান নিজের দায়িত্বে ভারতের সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তি করতে প্রস্তাব দেওয়ায় প্রবল চাপে বেজিং৷ কারণ আমেরিকা ও রাশিয়ার আগ্রহে ভারত এলিট মিসাইল ক্লাবের (এমটিসিআর) সদস্য হয়েছে৷ এবার এনএসজি-র সদস্য না হয়েও ভারত পরমাণু অস্ত্র প্রযুক্তির সব সুবিধে ভোগ করবে আমেরিকা, জাপান ও রাশিয়ার দাক্ষিণ্যে৷ এরপরও চিনা বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চানিয়াং জানিয়েছেন, “আগের অবস্থান বজায় রেখেই আমরা বলতে চাই, পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে (এনপিটি) সই না করে কোনও দেশ এনএসজি-র সদস্য হতে পারবে না৷ এনপিটিতে সই না করা বাকি দেশগুলি নিয়ে এনএসজি-তে আগে ঐক্যমতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ তারপর ভারতের মতো কোনও দেশ যারা এনএসজি-তে ঢুকতে আগ্রহী তাদের নিয়ে সিান্ত নেওয়া হবে৷”
অন্যদিকে, লালফৌজের তীব্র আপত্তি খারিজ করে লাদাখের ডেমচক সীমান্তে এক কিলোমিটার লম্বা পাইপলাইন বসানোর ও সেচখাল নির্মাণের কাজ শেষ করলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়াররা৷ ওই নির্মাণকাজ বন্ধ করার জন্য বার বার হুঁশিয়ারি দিয়েছিল লালফৌজ৷ কিন্তু পাল্টা হুমকি দিয়ে চ্যালেঞ্জ জানায় ইন্দো টিবেটান বর্ডার পুলিশ৷ পরে ভারতীয় সেনাদের কড়া পাহারায় নির্মাণকাজ শেষ করা হয়৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.