নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: শুনশান রাস্তার মোড়ে মোড়ে শুধু পুলিশি প্রহরা। চওড়া রাস্তার অর্ধেকের বেশি জুড়ে নাকাবন্দি। একটি গাড়ি যেতে পারে এমন জায়গা রাখা। মুখে মাস্ক পরে, খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে সকলকেই। গাড়ি থেমে নামার দরকার নেই তা সেকথা ইশারাতেই বলে দেওয়া হচ্ছে প্রথমেই। দ্বিতীয় দফার লকডাউন পর্বে রাজধানী দিল্লি যেন আরও সতর্ক, খানিকটা সন্ত্রস্তও।
বাংলায় একটি বহুল পরিচিত ব্র্যান্ডের ছাতা রয়েছে যারা নিজেদের বিজ্ঞাপনে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা সবেতেই তাদের ছাতাই ভরসা বলে একটা ছড়া ব্যবহার করে আসছে বহুদিন ধরেই। সেই ছড়াটা এতদিন পর্যন্ত দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের সঙ্গে দিব্য মানিয়ে যেত। মে মাসের দুপুর ৪৫ ডিগ্রি গরমে কাঠফাটা রোদ্দুরের মধ্যে মাথায় টুপি পরে, চোখে সানগ্লাস দিয়ে ইন্ডিয়া গেটের সামনে পোজ দিয়ে ছবি তুলছে এমন বহু মানুষকেই দেখা যেত। আবার দিল্লির কনকনে ঠান্ডায় রাত আটটাতেও ইন্ডিয়া গেটের সামনে ভিড়। গরমকালে রাত দুটোর সময়েই সেখানেও আইসক্রিমের গাড়ির সামনে ছোটখাট লাইনও দেখা যেত। এখন সেই ইন্ডিয়া গেট চত্বর খাঁ খাঁ করছে বললে কম বলা হবে। ইন্ডিয়া গেটের সিগন্যাল পার করে পুলিশের নাকা ছাড়া একটি জনমনিষ্যির দেখা মিলেনি।
পুলিশি কড়াকড়ি তো রয়েইছে তবে রাজধানীর মানুষ স্বতস্ফূর্তভাবেই যে লকডাউন মেনে চলছেন সেকথা বলতেই হবে। অনেকে অবশ্য একে চোর পালালে বু্দ্ধি বাড়ে বলে সমালোচনা করতেই পারেন। তবলিঘি জামাতের ঘটনায় দিল্লির করোনা পরিস্থিতি যে জটিল হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই দিল্লি সরকার ও এখানকার মানুষেরা আগে থেকে সতর্ক হলে দেশে করোনা সংক্রমণের তালিকায় দিল্লি প্রথম তিনের মধ্যে থাকত না বলেই মত বিশেষজ্ঞ মহলের।
মাসখানেক আগেই দিল্লির হিংসার ঘটনায় দিল্লি পুলিশের সমালোচনায় সকলেই মুখর হয়েছিলেন। তবে, করোনা মোকাবিলার ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশ যেন ত্রাতার ভূমিকায়। রাজধানীর ৪৩টি এলাকাকে করোনা হটস্পট হিসেব ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। শহরের মাঝখানেই মান্ডি হাউস মেট্রো স্টেশনের কাছেই বেঙ্গলি মার্কেট চত্বর সেই তালিকার মধ্যেই রয়েছে। তার সামনে কড়া পুলিশি প্রহরার মধ্যেই পুলিশের মানবিক মুখও চোখে পড়ল। সিনেমার পর্দায় হোক বা সংবাদমাধ্যমের খবরে পুলিশকে হাত পেতে টাকা নিতে দেখা দৃশ্য বিরল নয়। এখানেও সেই দৃশ্য দেখতে পাওয়া গেল। তবে, এলাকার বাসিন্দারা বাইরে বেরতে পারবেন না। তাই পুলিশের হাতে টাকা দিচ্ছেন তারাই নিত্যপ্রয়োজনীয় বা জরুরি জিনিসপত্র আনিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।
আইটিওর সিগন্যালে না বহুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়নি এমন অভিজ্ঞতা বোধহয় দিল্লির কোনও গাড়ির চালকের নেই তা হলফ করে বলা যায়। দিল্লি পুলিশের হেড কোয়ার্টারের সামনে সেই আইটি সিগনাল চোখের পলকে পার। যমুনা ব্রিজ পার করতেও এক মিনিটের বেশি সময় লাগছে না। রাস্তায় কদ্দিৎ কদাচিৎ এক আধজনকে দেখা গেলেও তারাও যেন খানিকটা ভীত, সন্ত্রস্ত তা দেখেই মালুম হচ্ছিল। লকডাউন মানার ক্ষেত্রে রাজধানী যে প্রথমসারিতে কয়েক ঘন্টা দিল্লির রাস্তায় থেকে বার প্রায় বার দশেক পরিচয়পত্র দেখিয়ে তা বুঝতে অসুবিধা হল না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.