সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নাতি-নাতনিদের আগলে বাড়িতে বসেছিলেন ৮৫ বছরের বৃদ্ধা। দূর থেকে উন্মত্ত জনতাকে আসতে দেখেছিলেন। ঘরের জানলা দিয়ে দেখেওছিলেন বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে তারা। কিন্তু বয়সের ভারে বাড়ি থেকে পালানোর সামর্থ্য হয়নি আকবরি। তাই মঙ্গলবার সকালে ঘরের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল তাঁর। দিল্লিতে হিংসার জেরে আরও এক মর্মান্তিক মৃত্যুর সাক্ষি রইল রাজধানী।
রবিবার রাত থেকেই অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে রাজধানী। লাঠি হাতে একদিকে স্লোগান, “দেশকে গদ্দারোকো গোলি মারো সালো কো।” তো অন্যদিকে তরোয়াল হাতে চিৎকার, “আজাদি চাহিয়ে আজাদি, ছিন লেঙ্গে আজাদি।” এমত অবস্থায় দিল্লি শান্ত হওয়ার পরিবর্তে যে উত্তেজনা যে আরও ছড়াবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও আগাম কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ব্যস্ত ছিলেন ট্রাম্প সফরকে ঘিরে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ, মউজপুর, সিলামপুর, গোকুলপুরীতে কড়া নজরদারি জারি করা হয়েছে। বাকি এলাকাগুলিতে মোতায়েন করা হয়েছে আধাসেনা। এর মধ্যেও বেড়ে চলেছে মৃত্যু মিছিল।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে মৃত আকবরির ছেলে সইদ সলমনি গোটা ঘটনার কথা জানান। তাঁর কথায়, “মঙ্গলবার সকালে আমার ছেলে-মেয়েরা জানায় বাড়িতে একফোঁটাও দুধ নেই। তাই দুধ আনতে বাজার গিয়েছিলাম। ফেরার সময় দেখি, আমাকে ছেলে ফোন করছে। জানায়, ১৫০-২০০ উন্মত্ত জনতা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। আমি যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু গেলে আমাকেও মেরে ফেলত।” জানা গিয়েছে, বাড়ির নিচের তলায় সইদের কাপড়ের দোকান ছিল। প্রথমে তাতে আগুন ধরানো হয়। এরপর উঠে তিনতলা ও চারতলায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
সইদের চার ছেলেমেয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও, তাঁর মা আকবরি পালাতে পারেননি। ওই বাড়িতেই আগুনে দগ্ধ হয় সে। ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে আকবরির মৃত্যু হয়। প্রায় ১০ ঘণ্টা বাড়িটি দাউদাউ করে জ্বলছিল বলে খবর। শেষপর্যন্ত দমকলবাহিনীর চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ততক্ষণে অবশ্য আগুনের তাপে দগ্ধ হয়ে গিয়েছেন আকবরি। ধরে আসা গলায় সালমানি বলেন, “মা নিশ্চয়ই সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছিলেন, কি্ন্তু কেউ শুনতে পেল না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.