সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পরনে সাদা কুর্তা-পাজামা। মাটিতে উবু হয়ে পড়ে রয়েছেন এক ব্যক্তি। দুহাত দিয়ে প্রাণপণে মাথা বাঁচানোর চেষ্টা। সামনে একদল উন্মত্ত জনতা লাঠি হাতে মারতে উদ্যত। উত্তর-পূর্ব দিল্লির ভয়াবহ হিংসার সেই ছবি ভাইরাল ইন্টারনেটে। সাম্প্রদায়িক হিংসা যে কী ভয়াবহ রূপ নিতে পারে তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ হল এই ছবি।
কে এই ব্যক্তি? নেটিজেনদের এই প্রশ্নই ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায়। জানা গিয়েছে, এই যুবকের নাম মহম্মদ জুবেইর। কেন সেদিন তাঁকে এইভাবে মারা হচ্ছিল? সে কি হিংসায় শামিল হয়েছিল? সেদিনের বিভীষিকার কথা সংবাদংমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন তিনি নিজেই। বলেছেন, মঙ্গলবার নমাজ পড়তে বেরিয়েছিলেন তিনি। বাচ্চাদের জন্য মিষ্টি কিনে বাড়ি ফিরছিলেন। তখনই ঝামেলার মধ্যে পড়ে যান তিনি। বলেছেন, ‘হঠাৎ আমাকে ঘিরে ধরল উন্মত্ত ভিড়। ওদের হাতে লোহার রড, হকি স্টিক, লাঠি। আমার হাড়গোড় ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত ওরা মারল। আমি প্রাণভিক্ষা চাইলাম। আমার ধর্ম নিয়ে ওরা অশ্রাব্য গালাগাল করল। আমি ওদের পায়ে পড়লাম, তখন আরও মারতে লাগল। মাঝে মাঝে ওরা কপিল মিশ্রর নাম নিচ্ছিল। মার খেতে খেতে আমার মাথা তখন ঘুরছে, বাড়িতে সন্তানদের কথা মনে পড়ছিল। ওরা নিরাপদে আছে তো? তারপর কিছু মনে নেই।’
তিনি জানিয়েছেন, মারতে মারতে হামলাকারীরা তাঁকে অজ্ঞান করে দেয়। এরপর তাঁকে কিছু লোকজন দিল্লির গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতালে ভরতি করেন। তাঁর শরীরে প্রচুর আঘাতের চিহ্ন ছিল। রক্তপাতও হয়েছিল প্রচুর। আপাতত হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এক তুতোভাইয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। পেশায় শ্রমিক জুবেইরের দুই মেয়ে এবং এক ছেলের বাবা। দিল্লির চাঁদবাগের বাসিন্দা জুবেইর ইতিমধ্যেই নিজের পরিবারকে উত্তরপ্রদেশে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখনও আতঙ্ক কাটছে না জুবেইর ও তাঁর ভাইদের। দু’কামরার ঘরে ভয়ে নিজেদের বন্দি করে রেখেছেন তাঁরা। এফআইআর করতে ভয় পাচ্ছেন। বেঁচে ফিরেছেন, সেটাই হয়তো প্রাপ্তি। বলছেন জুবেইর ও তাঁর পরিজনরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.