সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: স্রেফ সন্দেহের বশেই যে কাউকে আটক করতে পারে দিল্লি পুলিশ। CAA বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন দিল্লি পুলিশকে এমনই বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়ে্ছে। ১০ জানুয়ারি এই বিশেষ ক্ষমতা সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দিল্লি পুলিশের এই বিশেষ ক্ষমতা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপক সমালোচনা করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। এ প্রসঙ্গে টুইট করে কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণ করেন মিম নেতা আসাউদ্দিন ওয়েইসি। টুইটার হ্যান্ডেলে তিনি লেখেন, ” কেন্দ্রকে খুশি করতে কাজ করছে দিল্লি পুলিশ। তাই এবার তাদের ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের অধীনে ক্ষমতা দেওয়া হল। এই ক্ষমতাবলে দিল্লি পুলিশ যে কাউকে ১ বছর পর্যন্ত আটক করে রাখতে পারবে। অভিযুক্তরা নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের কোনও সুযোগ পাবে না।”
Delhi police has shown willingness to act in a way that pleases the Centre. Now it’s been empowered to detain under draconian NSA. It allows detention up to 1 yr without vakil, daleel, appeal & is popular with cops who want to go after anyone irrespective of their guilt/innocence https://t.co/hRbNEX5O8T
— Asaduddin Owaisi (@asadowaisi) January 17, 2020
CAA বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। তবে রাজধানী দিল্লির রাজপথের আন্দোলন সামাল দিতে নাস্তানাবুদ হয়েছে কেন্দ্র সরকার তথা প্রশাসন। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কখনও শীতের রাতে জল কামান ছোঁড়া হয়েছে। তো কখনও আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে আন্দোলনরত পড়ুয়াদের লাঠি পেটা করার অভিযোগ উঠেছে দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। ফলে বারবার প্রশ্নের মুখে পড়েছে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রাধীন দিল্লি পুলিশের এই ভূমিকা। এমনকী আদালতেও সামলোচিত হয়েছেন তাঁরা। তারপরেও কোনও বদল নেই। উলটে দিল্লি পুলিশের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা তুলে দিল কেন্দ্র।
National Security Act অনুযায়ী, পুলিশ কোনও ব্যক্তিকে দেশ বা আইন-শৃঙ্খলার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করে তাহলে তাকে আটক করতে পারবে। সর্বোচ্চ একবছর পর্যন্ত তাদের নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারবে। এই সময়ের মধ্যে কোনও চার্জশিট দাখিলের প্রয়োজন হবে না। এবার সাময়িকভাবে এই বিশেষ ক্ষমতা পেল দিল্লি পুলিশ। দিল্লির উপ-রাজ্যপালের স্বাক্ষর করা নোটিফিকেশনটি ১০ জানুয়ারি জারি করা হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্ষকর হবে।১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এই বিশেষ ক্ষমতা থাকবে দিল্লি পুলিশের কাছে। বিরোধীদের অভিযোগ, দিল্লিতে চলতে থাকা CAA-NRC বিরোধী আন্দোলন রুখতে এই অস্ত্র প্রয়োগ করল কেন্দ্র। যদিও দিল্লি পুলিশের দাবি, “রুটিনমাফিক নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই।” যদিও কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরি। তাঁর কথায়, “দিল্লিতে বিজেপি ক্ষমতায় নেই। তাই সেখানকার সরকারকে ভয় দেখাতেই দিল্লি পুলিশকে NSA-এর অধীনে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হল।” এই আইনকে ‘অগণতান্ত্রিক’ বলে আখ্যা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদাম্বরম। একই সুর শোনা গিয়েছে বাম নেতা মহম্মদ সেলিমের গলাতেও।
প্রসঙ্গত, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (Citizenship Amendments Act) প্রতিবাদ জ্বরে আক্রান্ত রাজধানী। জলকামান, গোলাগুলি, উড়ে আসা পাথরের ঢিল, রক্তপাত, ১৪৪ ধারা, কাঁদানে গ্যাসে কাঁদছে রাজধানী দিল্লি। গত ১৫ ডিসেম্বর জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের প্রতিবাদ মিছিলে লাঠিচার্জ করেছিল পুলিশ, ক্যাম্পাসের ভিতর ঢুকে রীতিমতো ছুঁড়েছে কাঁদানে গ্যাস। পুরুষ থেকে মহিলা, কোনও হোস্টেলই বাদ যায়নি, যা পুলিশি অভিযান থেকে রেহাই পেয়েছে! লাঠিচার্জের জন্য কারও মাথা ফেটেছে তো কেউ বা আবার শরীরের নান জায়গায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। যার প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে গোটা দেশ। আওয়াজ উঠেছে আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পড়ুয়াদের তরফেও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.