সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: ‘পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করলে, তবে কি রাজ্যগুলি আলাদা-আলাদা ভাবে যুদ্ধ করত? এই প্রশ্ন তুলে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arvind Kejriwal) করোনার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয়ভাবে লড়াইয়ের অনুরোধ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। মূলত অতিমারী রুখতে করোনার টিকা (COVID-19 Vaccine) কেন্দ্রীয়ভাবে কিনতে মোদি সরকারকে অনুরোধ করেছেন তিনি। তাঁর এই বার্তা নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা।
ঠিক কী বলেছেন কেজরিওয়াল? দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “রাজ্যগুলিকে নিজেদের টিকা কিনতে বলেছে কেন্দ্র। রাজ্যগুলো সব পক্ষের সঙ্গেই কথা বলেছে। কিন্তু কোনও রাজ্যই অতিরিক্ত ডোজ কিনতে পারেনি। এই কাজটা ছিল কেন্দ্রেরই।” উল্লেখ্য, টিকার ঘাটতি মেটাতে দিল্লি, পাঞ্জাব গ্লোবাল টেন্ডার ডেকেও সারা পায়নি বিদেশি টিকা উৎপাদক সংস্থাগুলির কাছ থেকে। ফাইজার, মর্ডানার মতো সংস্থাগুলি জানিয়েছে, রাজ্যগুলিকে আলাদা আলাদা করে তারা বিক্রি করবে না। একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারকেই তারা টিকা বিক্রি করতে পারে সংস্থার নীতি অনুযায়ী। ফলে, রাজ্যগুলি চাইলেও, করোনার টিকা কিনতে পারছে না। যে দেখে বিহার, মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি ইতিমধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, গ্লোবাল টেন্ডার ডেকে টিকা না কেনার। এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কেজরিওয়াল বলেছেন, “যতটা সম্ভব চেষ্টা করেছে রাজ্যগুলি। আমরা গ্লোবাল টেন্ডার ডেকেছি. সংস্থাগুলোর সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু ওরা আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে। পাকিস্তান যদি ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তবে কি রাজ্যগুলিকে নিজের মতো করে প্রতিরোধ করতে বলবে কেন্দ্র। কেন্দ্র কি দিল্লিকে পরমাণু বোমা তৈরি করতে বলবে? উত্তরপ্রদেশকে ট্যাংক কিনতে বলবে?”
টিকা নিয়ে কেন্দ্রের দূরদর্শিতার অভাবকেও খোঁচা দিয়েছেন কেজরিওয়াল। বলেছেন, “দুর্ভাগ্যবশত অনেক দেশের মতো ভারতও টিকাকরণ শুরু করেছে ছ’মাস দেরি করেছে। অথচ প্রথম টিকা ভারতীয়রাই তৈরি করেছে। এবং সেটাও ভারতেই হয়েছে। আমাদের উচিত ছিল তখন থেকেই উৎপাদন এবং মজুতে গুরুত্ব দেওয়া। সেটা করতে পারলে আমরা হয়তো করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেক মৃত্যু আটকাতে পারতাম।” এদিকে আবার কোভিড-ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যৌথ লড়াইয়ে পথের কাঁটা হয়ে উঠছে দিল্লি সরকারের কাছে। কেন্দ্র ও এমসিডি- উপর ও নিচের দুই সাংগঠনিক সংস্থার সাহায্য পেতেই মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হচ্ছে কেজরিওয়াল অ্যান্ড কোংকে।
মিউকরমাইকোসিস প্রতিরোধের অন্যতম শর্ত হল পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। আর এখানেই বিধি বাম! আসলে শহর পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব পুরসভার। দিল্লিতে পুরসভা তিনটি। উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব। তিনটিরই দখল রয়েছে বিজেপি-র কাছে। বরাবরই পুরসভা ও কেন্দ্রের মাঝে চাপের মধ্যে থাকে কেজরিওয়াল সরকার। এই অবস্থায় সেই চাপ বেড়েছে আরও। কারণ শহরের স্বার্থে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল যতই ব্যালেন্স করে কেন্দ্রকে না চটাতে চান, তাঁর উপমুখ্যমন্ত্রী বা অন্যান্যরা সে পথে হাঁটেন না। প্রায়শই কোনও না কোনও বিষয়ে পুরবোর্ড কিংবা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন আম আদমি পার্টি নেতারা। দূর্নীতি থেকে শুরু করে কর্তব্যে অবহেলা। একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ আনেন বিজেপি-আপ নেতারা। এই অবস্থায় তাই কিছুটা চাপেই রয়েছে দিল্লি সরকার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.