সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাফালে চুক্তির পর আম্বানির সংস্থাকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে একটি ফরাসি সংবাদপত্র। যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তেড়েফুঁড়ে আক্রমণে নেমে পড়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলি। এবার বিবৃতি দিয়ে কোনওরকম বেআইনি সুবিধা পাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। মন্ত্রকের দাবি, রাফালে চুক্তির সঙ্গে আম্বানির সংস্থাকে কর ছাড়ের যোগসূত্র খুঁজে বের করা ‘হাস্যকর’। তবুও রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটের আগে রাফালে কাণ্ডে হাতে অস্ত্র পেয়ে গেল বিরোধীরা।
[ আরও পড়ুন: ‘প্রতিপক্ষকে দুর্বল মনে করি না’, একান্ত সাক্ষাৎকারে অকপট প্রিয়া দত্ত ]
প্রেস বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে বলা হয় ওই কর মকুবের সঙ্গে রাফালে কেনার সম্পর্ক নেই। এই ধরনের প্রতিবেদনের মাধ্যমে ভুল পথে, উদ্দেশ্যমূলক ভাবে দুটি ঘটনার যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা হচ্ছে৷ ফরাসি সংবাদপত্র ‘লা মদে’ দাবি করেছে, অনিল আম্বানির মালিকানাধীন ফরাসি টেলিকম সংস্থা ‘রিলায়েন্স আটলান্টিক ফ্ল্যাগ ফ্রান্স’-এর কাছে প্রায় ১১৮২ কোটি টাকা পাওনা ছিল ফ্রান্সের। ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত বকেয়া কর বাবদ সেই অর্থ দাবি করে ফরাসি কর দপ্তর। জবাবে অনিলের সংস্থা সমঝোতার মাধ্যমে ৫৬ কোটি টাকা মেটানোর প্রস্তাব দেয়। যা ফরাসি কর দপ্তর অস্বীকার করে। এর পর ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত আর এক দফা তদন্ত হয়। সব মিলিয়ে অনিলের টেলিকম সংস্থার বকেয়া করের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১৫১ মিলিয়ন ইউরো বা ভারতীয় মুদ্রায় ১১৮২ কোটি টাকা। এর পর ২০১৫-র এপ্রিলে ফ্রান্সের কাছ থেকে ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান কেনার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। সেই ঘোষণার ছ’মাস পর অবশ্য দেখা যায়, তাৎপর্যপূর্ণভাবে অনিলের সেই কর প্রায় পুরোটাই মকুব করে দিয়েছে ফ্রান্স। সমঝোতা বাবদ ৫৬ কোটি টাকা দেওয়ার দাবি মেনে নিয়েছে কর দপ্তর।
কংগ্রেসের অভিযোগ, রাফাল নিয়ে দর কষাকষির মধ্যেই অনিল আম্বানি ১১২৫ কোটি টাকার করছাড়ের সুবিধা পেয়েছেন। ‘বন্ধু ডাবল এ’-র জন্যই দর কষছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনিই ‘মধ্যস্থতা’র ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাদের আরও দাবি, রাফালে নির্মাতা সংস্থা দাসাউ অ্যাভিয়েশনের স্বদেশি সঙ্গী হিসাবে কোনও অভিজ্ঞতা না থাকা রিলায়েন্স ডিফেন্সকে বেছে নেওয়ার পিছনে অনেক ‘হিসাব’ রয়েছে। এই কর ছাড় ও অন্য সুবিধার বিনিময়ে ফ্রান্স রাফালে পিছু দাম ধার্য করেছে ১,৬৭০ কোটি টাকা। ইউপিএ আমলে যা ছিল ৫২৬ কোটি। ফরাসি সংবাদপত্রের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই আসরে নেমে পড়ে কংগ্রেস। তাদের মত, এর থেকেই প্রমাণিত রাফালে চুক্তিতে বহুস্তরীয় দুর্নীতি হয়েছে। দলের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, “অনিল আম্বানির সংস্থা দেউলিয়া। তাদের বাঁচাতে সরাসরি মধ্যস্থতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদির কৃপায় ওরা ফুলে ফেঁপে উঠছে।” বিজেপির নির্বাচনী স্লোগানকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়।” প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই আম্বানির সংস্থাকে কর ছাড়ের সুবিধা দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি দাবি করেন।
[ আরও পড়ুন: ভিন জাতের ছেলেকে বিয়ের শাস্তি, স্বামীকে কাঁধে নিয়ে ঘুরলেন যুবতী ]
ফরাসি সংবাদপত্রের ওই খবরের পর আত্মপক্ষ সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস। সংস্থাটি বলেছে, কর মেটানোর খবর সম্পূর্ণ ভুয়া এবং অবৈধ। রাফালে চুক্তি থেকে কোনও সুবিধা নেয়নি তারা। ফরাসি সরকার যে বিপুল পরিমাণ কর বাকি থাকার কথা জানিয়েছিল, তা অযৌক্তিক এবং তাদের সঙ্গে ফ্রান্সের নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই হয়েছে এই বোঝাপড়া। ১০ বছর আগের ওই ঘটনায় তাদের ফ্রান্সে অবস্থিত টেলিকম সংস্থা ২০ কোটি টাকা বা ২.৭ মিলিয়ন ইউরো লোকসানে চলছিল। অথচ ফরাসি কর দপ্তর দাবি করেছিল ১১০০ কোটি টাকা। ফ্রান্সের কর নিয়ম মেনেই দু’পক্ষের সমঝোতা হয়েছিল ৫৬ কোটি টাকায়। রাফালে প্রস্তুতকারক দাসাউ অ্যাভিয়েশন যুদ্ধবিমান বানানোর ভারতীয় সহযোগী হিসেবে অনিলের মালিকানাধীন রিলায়েন্স ডিফেন্সকে বেছে নিয়েছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে কোনও সরঞ্জাম বানানোর অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। ফরাসি সংবাদপত্রের রিপোর্ট তাই রাফাল নিয়ে জল্পনা আরও উসকে দিল। এই চুক্তি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি চলছে। সেখানেও আবেদনকারীদের অস্ত্র সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন। নয়া রিপোর্ট তাঁদের হাতে বাড়তি অস্ত্র তুলে দিল বলে জল্পনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.