নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: সবকিছু ঠিক থাকলে দীর্ঘ ৫১ বছর পরে কংগ্রেসের সভাপতি পদে কোনও দলিত মুখ দেখতে পাওয়া যাবে। গান্ধী পরিবারের সমর্থনে কংগ্রেস সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মল্লিকার্জুন খাড়গের নাম সামনে আসার পর থেকেই তাঁর সভাপতি পদে বিষয়টি একপ্রকার পাকা বলেই মনে করা হচ্ছে। তেমনটা হলে বাবু জগজীবন রামের পরে খাড়গেই হবেন কংগ্রেসের দ্বিতীয় দলিত সভাপতি।
১৯৭০ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত জগজীবন কংগ্রেসের (Congress) সভাপতি দায়িত্ব সামলেছিলেন। ৫০ বছরের বেশি সময় পরে দেশের সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক দলের শীর্ষপদে একজন দলিত নেতা জায়গা পেলে তা নিসঃসন্দেহে বড় ঘটনা হতে চলেছে। যা বাদবাকি রাজনৈতিক সমীকরণের পাশাপাশি কংগ্রেসকে ভোট রাজনীতি আঙিনাতেও সুবিধা দেবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিকমহলের একাংশ। দেশের দলিত ভোটের সিংহভাগ যা বর্তমানে বিজেপির ঝুলিতেই পড়ছে সেই ধারা পুরোপুরিভাবে সরে না গেলেও তাতে খানিকটা হলেও যতি চিহ্ণ পড়তে পারে, এমন সম্ভাবনার কথা খারিজ করে দেওয়া যায় না।
পাশাপাশি দক্ষিণের রাজনীতি থেকে উঠে আসা খাড়গে কংগ্রেস সভাপতি হলে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতেও কংগ্রেস রাজনৈতিক সুবিধা পাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেসের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপি যেসময় দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে নিজেদের সংগঠন বিস্তারের উপর জোর দিচ্ছে এবং জনমানসে প্রভাব সৃষ্টির জন্য সেখানকার মানুষজনকে রাজ্যসভার মনোনীত সাংসদ হিসেবে নিয়ে এসেছে সেই জায়গা থেকে দেখলে খাড়গকে কংগ্রেসের সভাপতি পদে বসানোর সিদ্ধান্ত গান্ধী পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলা চলে।
কংগ্রেস সভাপতি পদের দৌড়ে খাগড়ের এগিয়ে আসার পিছনে গান্ধী পরিবারের মদত রয়েছে সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দীর্ঘদিন ধরেই গান্ধী পরিবারের বিশ্বাসভাজন নেতা হিসেবে খাড়গের পরিচিতি রয়েছে। ২০১৪ সালে কংগ্রেসের লোকসভার নেতার পদ পাওয়ার পরে রাহুল গান্ধীর রাফাল থেকে নোটবন্দির বিষয় নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে আক্রমণের রণকৌশলকে সংসদের অন্দরে ভালোমতই তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছিলেন খাড়গে। পরে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওরার পরেও গান্ধী পরিবাবের আস্থা খাড়গের উপরে অকটুও কম হয়নি। তাঁকে প্রথমে রাজ্যসভায় নিয়ে এসে এবং পরবর্তী কালে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতার পদটিও কংগ্রেসের তরফ থেকে খাড়গের হাতেই তুলে দেওয়া হয়েছে। কংগ্রেসের অন্তর্বতীকালীন সভাপতি সনিয়া গান্ধী খাড়গের উপরে যে অত্যন্ত ভরসা করেন তার প্রমাণ ২০১৯ সালে মহরাষ্ট্র মহা বিকাশ আঘাড়ি সরকার গঠনের সময়ে তাঁকে কেন্দ্রীয় প্রভারি হিসেবে মুম্বইতে পাঠানোর মত অনেক উদাহরণই রয়েছে। কংগ্রেসের সভাপতি পদপ্রার্থী দৌড়ে আচমকা খাড়গের নাম উঠে আসাও গান্ধী পরিবারের পছন্দের লোক বিষয়টিকে মজবুত করে।
এদিকে ঝাড়খন্ডের নেতা কে এন ত্রিপাঠী সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তাঁর মনোনয়ন খারিজ হয়ে গিয়েছে। শনিবার কংগ্রেস কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান মধুসূদন মিস্ত্রি এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ২০টি ফর্ম জমা দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৪টি ফরম বাতিল করেছে যাচাই-বাছাই কমিটি। কে এন ত্রিপাঠির ফর্ম নির্ধারিত মান পূরণ না করায় তা খারিজ হয়ে গিয়েছে। এখন কংগ্রেস সভাপতি পদের বর্তমান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং শশী থারুর। মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় আছে, তার পরই চিত্র পরিষ্কার হবে। কেউ নাম প্রত্যাহার না করলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হবে।” ১৭ অক্টোবর কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচন, ১৯ অক্টোবর নাম ঘোষণা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.