সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: “খুব কাছ থেকে পর পর দু’টি গুলি চালালাম। একবারে মাথা লক্ষ্য করে। উনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই পড়ে গেলেন। আমি অবশ্য চলে গেলাম না। তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে আমাকে। তাই আবার টিপলাম আমার দেশি পিস্তলের ঘোড়া। এবার লক্ষ্য পড়ে যাওয়া মানুষটার কপাল। কিন্তু গুলি বের হল না। আটকে গেল। পিস্তল খুলে গুলি বের করে ফের চালালাম ডান চোখের কাছে। তারপর চারপাশ দেখে নিয়ে এলাকা ছাড়লাম।”–গায়ে কাঁটা দেওয়া কোনও থ্রিলারের বিবরণ নয়। সত্যি ঘটনা। খুনির বয়ান। যে খুন ছ’বছর আগে হয়েছিল পুণের রাস্তায় এক ভোরে। প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে খুন হয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের যুক্তিবিদ ও সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকার। সেই খুনের ঘটনারই বিবরণ খোদ খুনির স্বীকারোক্তিতে প্রকাশ্যে এল সম্প্রতি।
[আরও পড়ুন: ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান না দেওয়ায় মুসলিম ক্যাব চালককে মারধর, গ্রেপ্তার তিন]
খুনির নাম শরদ কলসকর। ২০১৮ সালে নালাসোপারার একটি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা থেকে শরদ কলসকরকে গ্রেপ্তার করে মহারাষ্ট্র সন্ত্রাস দমন শাখা। কলসকরের বয়ানের ভিত্তিতেই খুনের মূল চক্রী বীরেন্দ্র তাউড়েকেও গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতেই খুনের কথা স্বীকার করে লিখিত বয়ান দেয় কলসকর। সেই বয়ানের ভিত্তিতেই কলসকরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। ১৪ পাতার স্বীকারোক্তিতে পুরো ঘটনা ও তার পূর্ব পরিকল্পনার বিবরণ দিয়েছে কলসকর। কীভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, নেপথ্যে কারা ছিলেন, ঘটনার দিন ঠিক কী ঘটেছিল, সবকিছু। কলসকর লিখেছে, ‘আগে থেকেই আমাকে তথ্য দেওয়া হয়েছিল, দাভোলকর প্রতিদিন প্রাতঃভ্রমণে বের হন। সেই মতো ঘটনার দিন সকাল থেকেই এলাকায় অপেক্ষা করছিলাম। উনি একটি ব্রিজের উপর উঠতেই কাছে গিয়ে খুব কাছ থেকে দেশি পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করি।’
২০১৩ সালের ২০ আগস্ট সকালে পুণেতে বাড়ির কাছেই খুন হন ৬৭ বছরের যুক্তিবাদী ও সমাজকর্মী নরেন্দ্র দাভোলকর। একইভাবে ২০১৫ সালে মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে খুন হন গোবিন্দ পানসারে ও এম এম কালবুর্গি। সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশকেও তার বেঙ্গালুরুর বাড়ির সামনে ২০১৭ সালে খুন করে দুষ্কৃতীরা। বুদ্ধিজীবীদের এই খুন নিয়ে হইচই শুরু হয় গোটা দেশ জুড়ে। খুনি কলসকর জানিয়েছে, ‘একটি হিন্দু কট্টরপন্থী সংগঠনের সদস্য বীরেন্দ্র তাউড়ে আমাকে রাজি করান দাভোলকরকে খুন করার ব্যাপারে।’ সে আরও বলে, ওই সংগঠনেই আগ্নেয়াস্ত্র চালানো, বোমা তৈরির প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তার পরই এক দিন বলা হয়, কয়েক জন যুক্তিবাদীকে খুন করতে হবে। দাভোলকরকে খুন করার ভার দেওয়া হয় তার উপর।
[আরও পড়ুন: ধর্মের ঊর্ধ্বে মানবতা! মুসলিমদের কবরস্থান গড়তে জমি দান হিন্দু গ্রামবাসীদের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.