জ্যোতির্ময় কর্মকার: একেই বোধ হয় বলে গোদের উপর বিষফোড়া৷ মানুষের বিধানে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে এখন তিন নম্বরে৷ এবার নির্বাচন কমিশনের আনুকূল্যের উপরেই নির্ভর করছে সিপিএমের জাতীয় দলের তকমা থাকবে কি না৷
চলতি নিয়ম অনুযায়ী, জাতীয় দলের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে গেলে যে কোনও রাজনৈতিক দলকেই অন্তত তিনটি রাজ্য থেকে সাকুল্যে ১১টি লোকসভা আসনে জিততেই হবে৷ অথবা অন্তত চারটি লোকসভা আসনে জেতার পাশাপাশি চারটি রাজ্য থেকে ৬ শতাংশ ভোট পেতেই হবে৷ এছাড়াও কমপক্ষে চারটি বেশি রাজ্যে আঞ্চলিক দল হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারলেও জাতীয় দলের মর্যাদার দাবি করা যায়৷ কিন্তু ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে প্রায় কোনও ক্ষেত্রেই সিপিএম আর জাতীয় দলের মর্যাদা ধরে রাখার মতো জায়গায় নেই৷ এই পরিস্থিতিতে ঘটনাচক্রে সিপিএমের রক্ষাকর্তা হতে পারে একমাত্র নির্বাচন সদনই৷ কারণ কমিশন সূত্রে খবর, পাঁচ বছর অন্তর রাজনৈতিক দলগুলির জাতীয় দলের মর্যাদার ‘স্টেটাস’ খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া বদলে এবার দশ বছর করা হতে পারে৷ অর্থাত্ পরপর দু’টি লোকসভা নির্বাচনে ধারাবাহিক খারাপ ফল করলে তবেই জাতীয় দলের তকমা বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে কমিশন৷ কেরলের মতো রাজ্যে প্রায় প্রতি নির্বাচনেই ক্ষমতা বদলের প্রবণতার কথা মাথায় রেখেই এই নিয়ম বদল করতে পারে কমিশন৷ যদিও এ হেন সিদ্ধান্ত বদলের খবরের এখনই কোনও সরকারি বৈধতা নেই৷ তবে এই সিদ্ধান্ত যদি কার্যকর হয় তাহলে আপাতত ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত মুখরক্ষা হতে পারে সিপিএমের৷
এতদিন ত্রিপুরায় ক্ষমতাসীন থাকার পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে বিরোধী শিবিরের মূল শক্তি হিসাবেই নিজেদের পরিচয় দিয়েছেন সীতারাম ইয়েচুরিরা৷ কিন্তু সদ্যসমাপ্ত পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে কেরলের ক্ষমতায় ফিরে এলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমতো অস্তিত্বের সঙ্কটে সিপিএম৷ স্বাভাবিকভাবেই মাত্র দুই রাজ্যের ক্ষমতা ঝুলিতে নিয়ে আবার নতুন করে জাতীয় রাজনীতিতে সিপিএমের ‘স্টেটাস’ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে৷ কারণ ২০১৪-র লোকসভা ভোটে সারা দেশ থেকে মাত্র ৯টি আসন পেয়েছে সিপিএম৷ তাদের মোট ভোট শতাংশের হার মাত্র ৩.২৫ শতাংশ৷ অর্থাত্ জাতীয় দলের তকমা ধরে রাখার জন্য ন্যূনতম ৬ শতাংশের থেকে ২.৭৫ শতাংশ কম৷ জাতীয় রাজনীতিতে কীভাবে প্রাসঙ্গিকতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তার ভাঁজ পড়ে গিয়েছে দিল্লির তাত্ত্বিক কমরেডদের কপালে৷
তবে শুধু সিপিএমই নয়, জাতীয় রাজনীতিতে বিজেপির আধিপত্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে বাম শরিক সিপিআই, মায়াবতীর বিএসপি এবং ইউপিএ-র শরিক এনসিপিরও৷ তিনটি রাজনৈতিক দলই ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচন এবং একাধিক বিধানসভা নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে খারাপ ফল করে চলেছে৷ লোকসভা ভোটের পরই জুলাই মাসে তিনটি দলকেই শোকজ করে কমিশন৷ তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কেন তাদের জাতীয় দলের তকমা বাতিল করা হবে না? যদিও এ প্রসঙ্গে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন৷ এদিকে জাতীয় দলের তকমা নিয়ে প্রচলিত নিয়ম-নীতির পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই দাবি তুলছে একাধিক দল৷ অঙ্কের জটিল হিসাব বাদ দিলে রাজনৈতিক ক্ষমতার নিরিখে বামেদের তুলনায় এখন জাতীয় ক্ষেত্রে বহু এগিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস৷ লোকসভায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৩৪ জন সাংসদকে পাঠানোর পাশাপাশি মণিপুর এবং ঝাড়খণ্ড বিধানসভাতেও তৃণমূলের অস্তিত্ব রয়েছে দীর্ঘদিন৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয়বার বিপুল জয়ের পরও নিয়মের ফাঁসে এখনও আঞ্চলিক দলের প্রতীক হিসাবেই রয়ে গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাসফুল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.