বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: ছিলেন সাতবারের সাংসদ। ২০০০ সালে প্রয়াত হন গীতা মুখোপাধ্যায়। প্রতিবাদী চরিত্রের পাশাপাশি মহিলাদের জন্য লড়াইয়ের কারণে আজও তাঁকে মনে রেখেছে সংসদ। মহিলা সংরক্ষণ সংশোধনী বিল নিয়ে আলোচনার সময় বারবার বিভিন্ন সাংসদের মুখে ঘুরে ফিরে এল সিপিআইয়ের এই নেত্রীর নাম। মোট চারজন সাংসদ বিলের ওপর বক্তব্য রাখার সময় গীতা মুখোপাধ্যায়ের অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এঁরা হলেন, তৃণমূলের কাকলী ঘোষ দস্তিদার, নিশিকান্ত দুবে, ডিএমকের কানিমোঝি ও নীরজ ডাঙ্গি। তাঁর নাম না নেওয়ায় ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলের এক সাংসদের কাছ থেকে কটাক্ষও শুনতে হল সোনিয়া গান্ধীকে।
কে ছিলেন গীতা মুখোপাধ্যায়? কিন্তু মৃত্যুর দুদশক পরেও সংসদে যাঁর কথা ঘুরে ফিরে এল? সিপিআইয়ের নেত্রী গীতা ছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া লোকসভা আসন থেকে সাতবারের বিজয়ী সাংসদ। তার আগে পাঁশকুড়া পূর্ব বিধানসভার চার বারের বিধায়ক ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর পাঁশকুড়া লোকসভার উপনির্বাচনে জেতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গঠিত দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী প্রাক্তন আমলা বিক্রম সরকার। গীতার আগে ওই আসন থেকে দীর্ঘদিন সাংসদ ছিলেন কংগ্রেস নেত্রী আভা মাইতি। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গীতার ছিল দিদি-বোনের সম্পর্ক। সংসদে দুজনই তাঁদের প্রতিবাদী চরিত্রের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। দল ছোট হলেও একটা সময় সংসদে প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে সিপিআইয়ের দুই সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায় এবং প্রয়াত গুরুদাস দাশগুপ্তকে চিনত গোটা দেশ।
গীতা মুখোপাধ্যায়ের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা অবদানের অন্যতম হল সংসদ ও বিধানসভায় মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের লড়াই। নয়ের দশকের মাঝামাঝি এই বিল সংসদে পেশ হওয়ার পর সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটির চেয়ারপার্সন ছিলেন গীতা মুখোপাধ্যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সদস্য। গীতার নেতৃত্বাধীন কমিটি ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের জন্য সুপারিশ করে। শুধু কমিটির সুপারিশই নয়, সংসদে এবং দলেও নারীর অধিকার নিয়ে আজীবন লড়াই করেছেন এই কমিউনিস্ট নেত্রী। গীতার স্বামী বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়ও ছিলেন সিপিআইয়ের প্রথমসারির নেতা। দীর্ঘদিন বামফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন প্রয়াত বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়।
আবার বুধবার সংসদে সোনিয়া গান্ধী ভাষণ শেষ করতেই বিজেপির নিশিকান্ত দুবে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করেন, “কংগ্রেস নেত্রীকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে আরও একটু উদারতা প্রত্যাশা করেছিলাম। মহিলা সংরক্ষণ বিল প্রসঙ্গে উনি প্রয়াত সিপিআই সাংসদ বাংলার নেত্রী গীতা মুখোপাধ্যায় এবং বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের অবদান স্মরণ করলে ভালো করতেন।” মঙ্গলবার মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ হওয়ার পরও দল নির্বিশেষে সংসদে ভিতরে-বাইরে সাংসদেরা গীতা মুখোপাধ্যায়ের কথা স্মরণ করেন। তার আগে সোমবার সংসদের পুরনো ভবনের বিদায়ী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও মহিলা সাংসদদের অবদানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে গীতা মুখোপাধ্যায়কে স্মরণ করেন। বুধবার সোনিয়ার ভাষণ শেষে কংগ্রেসের এক সাংসদ একান্তে বলেন, কংগ্রেস নেত্রীর গীতা মুখোপাধ্যায়, সুষমা স্বরাজদের নাম উল্লেখ না করার মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। সময় সংক্ষিপ্ত। তাই অল্প কথায় দলের অবস্থান ও অবদান তুলে ধরেছেন সোনিয়া।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.