গৌতম ব্রহ্ম: কিছুটা হলেও যেন শাপমোচন। সৌজন্য, খাস আইনসভার পেশ হওয়া সার্টিফিকেট। ধ্বনিভোটে কৃষিবিল পাশ, বিরোধীদের অধিবেশন বয়কট, আট সাংসদের সাসপেনশন। বিতর্কের এপিসেন্টার হয়ে ওঠা করোনাক্লান্ত সংসদভবনে এবার ঢুকে পড়ল গোমূত্রও (Cow urine)! এবং বলা বাহুল্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর তথ্যের সুবাদে তার কিছুটা ‘কলঙ্কমুক্তি’ও ঘটল।
কীভাবে? প্রশ্ন উঠেছিল, গোমূত্র-সহ একাধিক উপাদানে তৈরি পঞ্চগব্য ঘৃত কতটা নিরাপদ? উত্তরে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধন জানান, আয়ুশ মন্ত্রকের আয়ুর্বেদ রিসার্চ কাউন্সিল, কেন্দ্রীয় আয়ুর্বেদ বিকাশ অনুসন্ধান পরিষদের তত্ত্বাবধানে (সিসিআরএএস) পঞ্চগব্য ঘিয়ের উপর একাধিক পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছে। সেফটি স্টাডি, বায়োলজিক্যাল স্টাডি, টক্সিসিটি স্টাডি। সবেতেই সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে গোমূত্রযুক্ত পঞ্চগব্য। যার বাকি উপাদান দই, দুধ, ঘি ও গোময় বা গোবর। এবং এগুলি দিয়েই নিয়ম মেনে পঞ্চগব্য ঘি তৈরি করেছে গাজিয়াবাদের ‘ফার্মাকোপিয়াল ল্যাবরেটরি অফ ইন্ডিয়ান মেডিসিন’। উপাদান ও ‘ফাইনাল প্রোডাক্ট’-এর গুনমান পরখ করেছে দিল্লির আরব্রো ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড। ইমিউনিটি সংক্রান্ত ও টক্সিসিটি সংক্রান্ত গবেষণা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের জবলপুরের ‘কলেজ অফ ভেটেরেনারি সায়েন্স ও অ্যানিম্যাল হাসবেন্ডারি ফার্মাকোলজি’ বিভাগে। সব ক্ষেত্রেই পাশ করেছে পঞ্চগব্য ঘি। প্রমাণিত হয়েছে ইমিউনোমডিউলেটর হিসাবে এর কার্যকারিতাও। হর্ষবর্ধন উত্তরে আরও জানান, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের (Clinical trial) বাধা সসম্মানে টপকেছে গোমূত্র যুক্ত পঞ্চগব্য।
বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই অ্যালবিনো ইঁদুরের উপর এই আয়ুর্বেদিক ফমূর্লা প্রয়োগ করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, পঞ্চগব্যের প্রয়োগে ক্ষতি তো হয়নি, উলটে উল্লেখযোগ্যভাবে ইঁদুরগুলির গামা গ্লোবিউলিন, নিউট্রোফিল, অ্যাডেসিন, অ্যাবসলিউট লিম্ফোসাইট কাউন্ট বেড়েছে। শনিবার লোকসভায় দুই বিজেপি সাংসদ বিজয় বাঘেল ও অরুণ সাউ পঞ্চগব্য নিয়ে প্রশ্ন করেন। তার জেরেই মন্ত্রীর এই উত্তর। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর থেকেই গোহত্যা বন্ধ ও সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বার বার দেশের রাজনীতি উত্তাল হয়েছে, গো সম্পদ রক্ষা করতে কেন্দ্র বর্তমান বিজেপি সরকার চালু করেছে রাষ্ট্রীয় গোকুল মিশন, রাষ্ট্রীয় কামধেনু আয়োগ। গোমূত্রের ব্যবহার নিয়েও রাজনৈতিকভাবে বহু সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হয়েছে বিজেপিকে। বহুবার গোমূত্র ব্যবহারের ঝুঁকি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এদিন তাই দেশের আয়ুর্বেদ মহলের নজর ছিল সংসদে। হর্ষবর্ধনের উত্তরে স্বভাবতই আয়ুর্বেদ চিকিৎসকরা খুশি।
রাজ্য আয়ুর্বেদ পরিষদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. প্রদ্যোৎবিকাশ কর মহাপাত্র থেকে তরুণ আয়ুর্বেদ চিকিৎসক সুমিত সুর সবাই একবাক্যে সেই কথাই জানিয়েছেন। বলেছেন, “মন্ত্রীর উত্তরে সংসদে শাপমুক্ত হল গোমুত্র, পঞ্চগব্য ঘি। এ এক ঐতিহাসিক দিন। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রজুড়েই পঞ্চগব্য ঘিয়ের উল্লেখ। মনোরোগ, জন্ডিস-সহ বহু রোগের চিকিৎসায় এর ব্যবহার। দই, দুধ, ঘি, গোবর ও গোমূত্রের আলাদা ব্যবহারও রয়েছে আয়ুর্বেদে।” এদিন এবিষয়ে সিসিআরএএস-এর ডিজি ডা. কর্তার সিং ধীমানের প্রতিক্রয়া চায় ‘সংবাদ প্রতিদিন’। ধীমান জানান, “এই ব্যাপারে যা বলার মন্ত্রী বলেছেন। আলাদা করে আমার কিছু বলা উচিত হবে না।” যদিও মডার্ন মেডিসিনের চিকিৎসকরা এখনই গোমূত্রকে ‘ক্লিনচিট’ দিতে রাজি নন। ব্যথা বিশেষজ্ঞ ডা. দেবাঞ্জলি কর জানালেন, “সবে অ্যালবিনো র্যাটের উপর অ্যানিম্যাল ট্রায়াল হয়েছে। গোমূত্র নিয়ে আরও অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা গবেষণার প্রয়োজন। মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য সম্পূর্ণ নয়। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে কিছু মানুষ এর অপব্যবহার করতে পারেন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.