গৌতম ব্রহ্ম: অ্যান্টিবডি (Antibody) উধাও হওয়ার তত্ত্বকেই মান্যতা দিলেন দেশের ভাইরোলজিস্টরা। পুণের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স, এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’-এর ডা. সত্যজিৎ রথ ও দিল্লির ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইমিনোলজি’র ডা. বিনীতা বল। দেশবরেণ্য এই দুই ইমিউনোলজিস্ট বেশ কয়েকটি গবেষণার সূত্রে ধরে সোমবার জানিয়ে দিলেন, অ্যান্টিবডি শরীরে তৈরি হয়েছে মানে করোনা প্রবেশ করেছিল। কিন্তু তা সারাজীবনের রক্ষাকবচ হয়ে উঠবে না। তিন-চার মাসের মধ্যে তা গায়েব হয়ে যেতে পারে।
মানব শরীরে সাধারণত জীবাণুর মোকাবিলায় দু’ধরনের অ্যান্টবডি তৈরি হতে পারে। নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টবডি এবং নন-নিউট্রিলাইজিং সারকুলেটরি অ্যান্টিবডি। প্রথম ধরনের অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে শরীরে ঢুকতে বাধা দেয়। ঢুকে গেলে কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়। দ্বিতীয় ধরনের অ্যান্টবডি জীবাণুর অংশের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলেও তার কার্যকারিতা পুরোপুরি নষ্ট করতে পারে না। বরং কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিভীষণের ভূমিকা নেয়। বিনাশ করার পরিবর্তে জীবাণুর কোষে ঢোকার রাস্তাকে মসৃণ করে। একে বলে ‘অ্যান্টিবডি ডিপেন্ডেন্ট এনহান্সমেন্ট’। ডেঙ্গু এবং সার্সের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ দেখা গিয়েছে। সার্স-কোভ-২-এর ক্ষেত্রে অবশ্য এখনও তেমন প্রমাণ চোখে পড়েনি।
সম্প্রতি আইসল্যান্ডের গবেষকরা করোনাজয়ীদের মধ্যে সেরো সার্ভুলেন্স চালায়। ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। তার উল্লেখ করে ভাইরোলজিস্ট ডা. সিদ্ধার্থ জোয়ারদার জানান, সেরো সার্ভুলেন্সে যে অ্যান্টিবডি টেস্ট হচ্ছে তাতে শুধু ‘পজিটিভ’ বা ‘নেগেটিভ’ জানা যাচ্ছে। কিন্তু অ্যান্টিবডির পরিমাপ জানার উপায় নেই। তাই মজুত অ্যান্টিবডি কতক্ষণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে পারবে তা বলা মুশকিল। আইসল্যান্ডের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, করোনাজয়ীদের রক্তে অ্যান্টিবডি টিকছে বড়জোর চার মাস। তাছাড়া সেই অ্যান্টিবডি যে করোনার ঢাল হয়ে উঠতে পারবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। বরং কিছু ক্ষেত্রে তা কোভিডের সহায়ক হতে পারে!
তবে কী করোনাজয়ীদের পুনসংক্রমণ তারই ইঙ্গিত? শহরের ভাইরোলজস্টিদের মত, কোভিডের ক্ষেত্রে তৈরি হওয়া অ্যান্টবডি যে স্বল্পায়ু তার প্রমাণ আগেই মিলেছে। বিশেষ করে উপসর্গবিহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীর পুনঃসংক্রমণের সম্ভাবনা যে অনেকটাই বেশি সেই তথ্য ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমে উত্তরবঙ্গ, পরে কলকাতায়ও পুনঃসংক্রমণের ঘটনা প্রথম ‘সংবাদ প্রতিদিন’-ই প্রকাশ্যে আনে। কিন্তু করোজয়ীদের দেহ থেকে ভাইরাস আলাদা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো যায়নি বলে, প্রামান্য কোনও তথ্য হাতে আসছিল না ভাইরোলজিস্ট ও ইমিউনোলজিস্টদের। এবার সত্যজিৎ-বিনীতা জীবাণুবিজ্ঞানের আলোয় সেই মত প্রতিষ্ঠা করলেন। আইসল্যান্ডের উদাহরণ টেনে সাফ জানিয়ে দিলেন, অ্যান্টিবডি কোভিডের ক্ষেত্রে রক্ষাকবচ হয়ে উঠবেই, তার কোনও গ্যারান্টি নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.