সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দিন কয়েক আগেই নিউইয়র্কে বাঘের শরীরে করোনার সন্ধান মিলেছিল, যা রীতিমতো উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। কারণ, এযাবৎকাল শুধু মানবশরীরেই এই প্রাণঘাতী ভাইরাস সংক্রমণের তথ্য মিলেছিল। কিন্তু কোনও জন্তুর শরীরে COVID-19 সংক্রমণের খবর মেলেনি তার আগে। কিন্তু এবার বাঘের পর ভারতে বিশেষ ২ প্রজাতির বাদুরের শরীরেও পাওয়া গিয়েছে COVID-19 ভাইরাস।
বাদুররা যে COVID-19-এর বাহক হতে পারে, এমন আভাস আগেই মিলেছিল গবেষকদের তরফে। এবার ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের (Indian Council of Medical Research) এক গবেষণায় উঠে এল এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংস্থার রিপোর্ট বলছে, ভারতে দুই প্রজাতির বাদুর- ইন্ডিয়ান ফ্লায়িং ফক্স এবং ফল খাওয়া বাদুর অর্থাৎ রসেটাস (Rousttus) বাদুরের শরীরে মিলেছে বিটা-করোনা ভাইরাসের ভাইরাল স্ট্রেনের খোঁজ।
করোনা ভাইরাসের উৎসের কারণ বাদুর হতে পারে কিনা, আসলে সেই বিষয়টি নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছিল ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এবং পুণের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি (এনআইভি)। এই দুই গবেষক সংস্থার তরফে কেরল, তামিলনাড়ু, হিমাচলপ্রদেশ এবং পুদুচেরীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ইন্ডিয়ান ফ্লায়িং ফক্স এবং রসেটাস-এই ২ প্রজাতির বাদুড় সংগ্রহ করে পরীক্ষানিরীক্ষার কাজ চলছিল। তবে এক্ষেত্রে উল্লেখ্যযোগ্য হল, এই ২ প্রজাতিরই ২৫টি বাদুড়ের গলা থেকে পাওয়া নমুনার রিভার্স-ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) পরীক্ষা করে এই মারণ ভাইরাসের ভাইরাল স্ট্রেনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।
আইসিএমআরের তথ্য অনুযায়ী মনে করা হচ্ছে যে, নয়া করোনাভাইরাসের বাহক কিংবা উৎস এই দুই প্রজাতির বাদুড় হলেও হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এই ২ প্রজাতির বাদুড়ের থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে কিনা, সেটা এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত করে জানায়ানি দুই গবেষণা সংস্থা। চাঞ্চল্যকর এই গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চে।
উল্লেখ্য, এর আগেও বিভিন্ন সময়ে একাধিক প্রাণঘাতী ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে বাদুরের শরীরে। ২০০১ সালে যখন নিপা ভাইরাস মাথাচাড়া দিয়েছিল ভারতে, সংক্রামিত প্রায় ৬৬ এবং মৃত্যু কম করেও ৪৫, সেই সময় আইসিএমআর এবং এনআইভির রিপোর্ট বলেছিল, ফল খাওয়া বাদুড়েরাই এই ভাইরাসের বাহক। এরপর ২০০২ সালে সার্স ভাইরাসের সংক্রমণের সময়েও বাহক হিসেবে এই বাদুড়ের নামই করা হয়েছিল। যেহেতু সার্স ভাইরাসের পরিবারেরই সদস্য এই সার্স-কভ-২ (SARS-CoV-2), তাই এই ভাইরাসের বাহক হিসেবে এই প্রজাতির বাদুড়কেই সন্দেহ করা হচ্ছিল। বিজ্ঞানীদের কথায়, প্রায় ৬৬ রকম ভাইরাসের বাহক হল বাদুড়। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনই অদ্ভুত যেখানে ভাইরাসরা নানাভাবে নিজেদের বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হয়। এমনকী কোনও উপসর্গহীন সংক্রমণ ঘটাতে পারে এমন ভাইরাসও নিশ্চিন্তে বেড়ে ওঠে বাদুড়ের শরীরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.