নয়াদিল্লি: ভারতে করোনার (Corona) দ্বিতীয় ঢেউ আসার সম্ভাবনা নেই। সরাসরি একথা না বললেও কার্যত এমনই বার্তা দিল কেন্দ্র। এইমসের ডিরেক্টর ড. রণদীপ গুলেরিয়া ভারতে করোনার ‘সেকেন্ড ওয়েভ’ আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করলেও তা মানতে নারাজ কেন্দ্র। এই ধরনের বিষয়কে একেবারে খারিজ করে দিয়েছেন ICMR-এর ডিজি বলরাম ভার্গব।
মঙ্গলবার দেশের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি প্রায় নস্যাৎই করে দিয়েছেন তিনি। ভার্গব বলেছেন, “জানি না আপনারা সেকেন্ড ওয়েভ বলতে কী বোঝাতে চাইছেন। আমেরিকা (America) এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে সংক্রমণ চরমে পৌঁছে গিয়েছিল। সেখান থেকে নেমেছে এবং তারপরেই সেখানে সেকেন্ড ওয়েভ এসেছে। আমরা তাদের থেকে শিক্ষা নিয়েছি। আমরা কার্ভটাকে ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হয়েছি। সে কারণে আমাদের এখানে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। কার্যকরী লকডাউনের জন্যই তা সম্ভব হয়েছে। আমরা সেই চরম জায়গাতে পৌঁছাইনি।”
করোনার ভ্যাকসিনের (Covid-19 Vaccine) ক্ষেত্রে জোর ভারতে জোরকদমে কাজ চলছে বলেও এদিন জানিয়েছেন ভার্গব। তিনি বলেছেন, “ভারতে তিনটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। ক্যাডিলা ও ভারত বায়োটেক প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল সম্পন্ন করে ফেলেছে। সেরাম ইনস্টিটিউট দ্বিতীয় পর্যায়ের বি থ্রি ট্রায়াল শেষ করেছে। ছাড়পত্র মিললেই তারা দেশের ১৪টি জায়গায় ১৫০০ স্বেচ্ছাসেবীর উপর তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু করবে।” রাশিয়ার (Russia) ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল ভারতে করার বিষয়ে ভ্যাকসিন কমিটি এবং কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছেন ভার্গব। ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে রাশিয়ার ইতিহাস ভাল বলেও এদিন প্রশংসা করেছেন তিনি। জরুরি ভিত্তিতে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য কেউ এখনও পর্যন্ত আবেদন করেনি বলে এদিন এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ।
এদিকে, করোনা পজিটিভিটি রেটের ক্ষেত্রে জাতীয় গড়ের তুলনায় বাংলার (West Bengal) ভাল অবস্থানের প্রশংসা করেছে কেন্দ্র। মঙ্গলবার দেশের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে রাজেশ ভূষণ বলেন, “বাংলা, ওড়িশা, গুজরাতের মতো রাজ্যে পজিটিভিটি রেট কম। দেশের পজিটিভিটি রেটের তুলনায় তা কম। যা ভাল বিষয়। দেশের পজিটিভিটি রেট ৮.৪ শতাংশ।” দেশের বেশ কিছু জায়গা থেকে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেষ্টে নেগেটিভ রিপোর্ট আসার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে কেন্দ্র। রাজ্যগুলিকে চিঠি লিখে এই সমস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আরটি-পিসিআর টেষ্ট করার কথা বলা হয়েছে বলেও ভূষণ জানিয়েছেন।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে দ্বিতীয়বার করোনা সংক্রমণের শিকার হয়েছেন এমন তথ্যও সামনে এসেছে। সেই বিষয়টি নিয়ে ‘চিন্তার কিছু নেই’ বলে আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করেছে কেন্দ্র। দ্বিতীয়বার সংক্রমণ খুবই বিরল বলেই একযোগে মন্তব্য করেছেন ভার্গব ও ভূষণও। এ প্রসঙ্গে ভার্গব বলেছেন, “ভাইরাল সংক্রমণের ক্ষেত্রে পুনরায় সংক্রমণ খুবই বিরল। এক্ষেত্রে আমি মিজলসর উদাহরণ দেব। যখন একবার কোনও মানুষের মিজলস হয় তখন যে সারা জীবনের জন্য নিশ্চিন্ত হয়ে গেল এমনটাই মনে করা হয়। কিন্তু সামান্য কিছু পুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। একইভাবে কোভিড—১৯ এর ক্ষেত্রে আমরা পুনসংক্রমণ দেখতে পেয়েছি। কিন্তু এটা নিয়ে সেভাবে চিন্তার কিছু নেই। পুনসংক্রমণ হলেও তখন সংক্রমণ খুবই সামান্য থাকে।” উল্লেখ্য, করোনার ক্ষেত্রে যে পুনসংক্রমণের সম্ভবনা রয়েছে এদিন সে কথাই কার্যত স্বীকার করে নিল কেন্দ্র। এর আগে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তা ‘মনগড়া’ বলে ভূষণ উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.