সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভুল তথ্য এবং ভুয়ো পরিচয়পত্রের সাহায্যে সংরক্ষণের সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে বিপাকে বিতর্কিত আমলা পূজা খেদকার। পরিস্থিতি যে পথে যাচ্ছে তাতে চাকরি হারানোর পাশাপাশি গ্রেপ্তারির সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। এহেন পরিস্থিতির মাঝেই জানা গেল গত ৫ দিন ধরে কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না অভিযুক্ত পূজার। এমনকি মঙ্গলবার মুসৌরির লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল তাঁর, সেখানেও উপস্থিত হননি তিনি। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই শোরগোল শুরু হয়েছে।
একের পর এক কারচুপির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর পূজার নিয়োগ বাতিল করতে তাঁকে শোকজ নোটিস জারি করেছে ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন (UPSC)। দিল্লি পুলিশের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে এফআইআরও। সেই মতো বেআইনি ভাবে সংরক্ষণের সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে পূজার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দিল্লি পুলিশের অপরাধদমন শাখা। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গঠিত হয়েছে তদন্ত কমিটি। এই কমিটির তরফেই গত ১৬ জুলাই নোটিস পাঠানো হয়। যেখানে পূজার প্রশিক্ষণ পর্ব আপাতত স্থগিত করার পাশাপাশি গত মঙ্গলবার তাঁকে তলব করা হয়েছিল লালবাহাদুর শাস্ত্রী ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে। এ সবকিছুর মাঝে জানা গেল, হাজিরা তো দূর। গত ৫ দিন ধরে কোনও খোঁজ নেই বিতর্কিত আমলার।
পূজা খেদকারকে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত চাকরি পাওয়ার পর ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে। ২০২৩ সালের ব্যাচের শিক্ষানবিশ আমলা পূজার মহারাষ্ট্রের পুণেতে অ্যাসিসট্যান্ট কালেক্টর হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রবেশনারি আইএএস অফিসারদের যে সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা নয়, তা নিচ্ছিলেন তিনি। নিজের অডি গাড়িতে লালবাতি এবং মহারাষ্ট্র সরকারের বোর্ড লাগিয়ে ঘুরতেন। যদিও সেই অনুমতি নেই প্রবেশনারি আইএএস অফিসারদের। শুধু তাই নয়, অ্যাডিশনাল কালেক্টর অজয় মোরের অনুমোদন ছাড়াই তাঁর অফিসের আসবাবপত্র সরিয়ে ফেলে অফিসের একাংশ দখল করেন বলেও অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি রেভিনিউ অ্যাসিসট্যান্টকে পূজা নির্দেশ দেন, লেটারহেড দিতে হবে তাঁকে। ঘরের বাইরে রাখতে হবে নেমপ্লেট। আরও জানিয়ে দেন, সিনিয়ার আধিকারিকদের মতোই সুযোগ সুবিধা দিতে হবে তাঁকে। আবদারের এই ঘনঘটার মধ্যেই পূজাকে ওয়াশিম জেলায় বদলি করা হয়। এর পরই তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসতে থাকে।
তদন্তকারীদের দাবি, চাকরি পেতে ভুয়ো শংসাপত্রের পাশাপাশি নাম ও বয়স ভাঁড়িয়েছিলেন পূজা। ২০২০ সালে পূজার ব্যবহৃত নাম ছিল খেদকার পূজা দিলীপরাও। বয়স লেখা ছিল ৩০। আবার ২০২৩ সালের পরীক্ষায় সেই নাম বদলে করা হয় পূজা মনোরমা দিলীপ খেদকার। বয়স ৩১। এর পরই প্রশ্ন ওঠে, তিন বছরে মাত্র এক বছর বয়স কী করে বাড়ল! আসলে ইউপিএসসিতে জেনারেল ক্যাটাগরির প্রার্থী ৩২ বছর বয়সের মধ্যে ৬ বার পরীক্ষা দিতে পারেন। আবার ওবিসি প্রার্থীরা ৩৫ বছরের মধ্যে ৯ বার পরীক্ষায় বসতে পারেন। সূত্রের দাবি, পূজা মোট ১১ বার ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। অভিযোগ প্রতিবার পরীক্ষা দেওয়ার সময় নিজের নাম ও বয়েস ভাঁড়িয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, চাকরি পেতে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ভুয়ো শংসাপত্র ব্যবহার করেছেন অভিযুক্ত। জানা গিয়েছে, MBBS কোর্সে ভর্তির সময় কলেজে যে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ জমা দেন পূজা, সেখানে তাঁকে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ তথা স্বাভাবিকই বলা হয়েছিল। অথচ ইউপিএসসি পরীক্ষায় নিজেকে বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন বলে দাবি করেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.