সোমনাথ রায়, উদয়পুর: একের পর এক নির্বাচনে বিপর্যয়। দলের অন্দরে বিদ্রোহ। দৃঢ় নেতৃত্বের অভাব। সবমিলিয়ে ধুঁকছে কংগ্রেস। এহেন পরিস্থিতিতে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা তথা দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমও মেনে নিলেন যে মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে দল।
শনিবার উদয়পুরের ‘চিন্তন শিবিরে’র দ্বিতীয় দিনে দলের হয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে বসেন চিদম্বরম। দেশে ভয়ংকর মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও আর্থিক মন্দর মতো জলন্ত ইস্যু থাকলেও কেন বিজেপির জয়রথ থামাতে পারছে না কংগ্রেস, বলে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছি। দেশের এহেন আর্থিক দুরবস্থার বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। আমাদের কৌশল আরও ঝালিয়ে নিয়ে মানুষের কাছে দ্রুত পৌঁছতে হবে।”
বলে রাখা ভাল, ‘চিন্তন শিবিরে’র প্রথম দিনেই কংগ্রেসে (Congress) রীতিমতো বৈপ্লবিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলেছে। নির্বাচনে লড়তে এখন থেকে একই পরিবারের একজনকেই দেওয়া হবে টিকিট বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সাংগঠনিক সংস্কারের লক্ষ্যে এবং আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে দলে পরিবারতন্ত্রে রাশ টানতেই এমন সিদ্ধান্ত হতে চলেছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তথাকথিত সাংগঠনিক রদবদলের এই আবহেও কংগ্রেস আছে কংগ্রেসেই। গান্ধী পরিবারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকার চিরাচরিত ট্র্যাডিশন অটুট রাখতেই প্রস্তাবিত ওই নয়া নিয়মেও ফাঁক থাকছে যথারীতি। ‘ব্যতিক্রম’ হিসাবে বলা হয়েছে, পরিবারের দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি যদি প্রার্থী হতে চান, তবে তাঁকে ন্যূনতম পাঁচ বছর সংগঠনের কাজ করতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে কর্মসমিতির অন্যতম সদস্য অজয় মাকেন একথা জানাতেই প্রশ্ন ওঠে, এই নিয়ম কি গান্ধীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? মাকেনের জবাব, “গান্ধীদের সবাই পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে রাজনীতি করছেন। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও কাজ শুরু করছেন ২০১৮ সাল থেকে।” স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রিয়াঙ্কাকে টিকিট দেওয়ার রাস্তা করে দিতেই কি ন্যূনতম পাঁচ বছর সাংগঠনিক কাজে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতাকে তথাকথিত ওই যোগ্যতার মাপকাঠি করা হল? সদুত্তর অবশ্য এখনও অধরাই।
জোটসঙ্গী বাছাই নিয়ে সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ভাষণে তেমন কোনও দিকনির্দেশ না মিললেও শিবিরের প্রথম দিনেই নয়া সাংগঠনিক কাঠামোর ছবি শুক্রবার মেলে ধরেন অজয় মাকেন। বিজেপির ধাঁচে কংগ্রসেও এবার গড়া হবে মণ্ডল কমিটি। সংগঠনে বুথ ও ব্লক কমিটির মাঝে সামঞ্জস্য তৈরি করতে তৈরি হবে মণ্ডল কমিটি। ১৫-২০টি বুথ নিয়ে তৈরি হবে এক-একটি মণ্ডল। তিন থেকে পাঁচটি মণ্ডল নিয়ে হবে ব্লক কমিটি। সংগঠনের যে কোনও স্তরের কমিটির অন্তত অর্ধেক সদস্যের বয়স হতে হবে পঞ্চাশের নিচে। সঙ্গে সংগঠনে এক ব্যক্তি এক পদ নীতি তো থাকছেই।
গত আট বছরে বিভিন্ন নির্বাচনে লাগাতার পরাজয়ের তেতো স্বাদ পেতে পেতে বীতশ্রদ্ধ কংগ্রেস নেতারা। যেভাবেই হোক ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তারা। সংগঠন কবে ও কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, সেই উত্তর দেবে সময়। তবে সেই লক্ষ্যে ‘সংকল্প শিবিরের’ মতো মেগা ইভেন্টের জন্য সেজে উঠেছে উদয়পুর। শহরের কোনায় কোনায় ছেয়ে গিয়েছে চিন্তন শিবিরের হোর্ডিং। মহাত্মা গান্ধী, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, আম্বেদকর থেকে শুরু করে জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী হয়ে সোনিয়া-রাহুল-প্রিয়াঙ্কা, সবারই ছবি ও বক্তব্য রয়েছে সেই সব হোর্ডিংয়ে। ঠাঁই পেয়েছেন পি ভি নরসিমা রাও, ড. মনমোহন সিংরাও। তেরঙ্গা পতাকায় হাত ছাড়াও রয়েছে কংগ্রেসের সাবেকি প্রতীক চরকা। ভবিষ্যতের ব্লুপ্রিন্ট তৈরির কর্মযজ্ঞে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সোনালি অতীতকে। গৌরবোজ্জ্বল নায়কদের দিকে তাকিয়েই নতুন শক্তি খুঁজতে চাইছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল।
দিকনির্দেশ না মিললেও শিবিরের প্রথম দিনেই নয়া সাংগঠনিক কাঠামোর ছবি শুক্রবার মেলে ধরেন অজয় মাকেন। বিজেপির ধাঁচে কংগ্রসেও এবার গড়া হবে মণ্ডল কমিটি। সংগঠনে বুথ ও ব্লক কমিটির মাঝে সামঞ্জস্য তৈরি করতে তৈরি হবে মণ্ডল কমিটি। ১৫-২০টি বুথ নিয়ে তৈরি হবে এক-একটি মণ্ডল। তিন থেকে পাঁচটি মণ্ডল নিয়ে হবে ব্লক কমিটি। যে কোনও স্তরের কমিটির অন্তত অর্ধেক সদস্যের বয়স হতে হবে পঞ্চাশের নিচে। সঙ্গে সংগঠনে এক ব্যক্তি এক পদ নীতি তো থাকছেই। গত আট বছরে বিভিন্ন নির্বাচনে লাগাতার পরাজয়ে বীতশ্রদ্ধ কংগ্রেস নেতারা। যেভাবেই হোক ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তারা। সংগঠন কবে ও কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, সেই উত্তর দেবে সময়। তবে সেই লক্ষ্যে ‘সংকল্প শিবিরের’ মতো মেগা ইভেন্টের জন্য সেজে উঠেছে উদয়পুর। ভবিষ্যতের ব্লুপ্রিন্ট তৈরির কর্মযজ্ঞে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সোনালি অতীতকে। গৌরবোজ্জ্বল নায়কদের দিকে তাকিয়েই নতুন শক্তি খুঁজতে চাইছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.