সোমনাথ রায়, আহমেদাবাদ: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে আর জি কর বা প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ। আহমেদাবাদে কংগ্রেসের বর্ধিত কর্মসমিতির বৈঠকে মঙ্গলবার দিনভর ঘোরাফেরা করল বাংলা সংক্রান্ত নানা প্রসঙ্গ। নজর কাড়ল অন্যতম হেভিওয়েট নেতা প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর অনুপস্থিতি। পাশাপাশি স্ট্যাচু অব ইউনিটি থেকে শুরু করে গান্ধী-নেহরুর সঙ্গে বিবাদের নানা ইতিহাস টেনে লৌহমানব সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলকে যেভাবে কংগ্রেসের থেকে হাইজ্যাক করার জোরালো চেষ্টা করছে বিজেপি, তা রুখতে অবশেষে আসরে নামার সিদ্ধান্ত নিল কংগ্রেস।
দেশকে বিজেপির হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়েই ‘ন্যায়পথ: সংকল্প, সমর্পণ ও সংঘর্ষ’– এই থিমে অনুষ্ঠিত হওয়া কর্মসূচির প্রথমদিন দেশকে বিজেপির অন্যায় থেকে ন্যায়ের পথে নিয়ে যাওয়ার সংকল্প করল কংগ্রেস। যেখানে ঠিক হল বিজেপির হাতে হাইজ্যাক হয়ে যাওয়া প্যাটেলকে ছিনিয়ে আনতে হবে। সাত বছর আগে সর্দার প্যাটেলের মূর্তি উদ্বোধনের দিন থেকেই যেভাবে তাঁর প্রতি কংগ্রেসের বঞ্চনা, অপমানের ইতিহাস টেনে লৌহমানবকে কার্যত ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি, তা পুনরুদ্ধার করতে এত বছর বাদে কোমর বেঁধে নামল কংগ্রেস। ঠিক হয়েছে দেশবাসীর কাছে তুলে ধরা হবে কীভাবে মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে প্যাটেল ও জওহরলাল নেহরু কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভারত তৈরি করেছেন, সেই আখ্যান। ‘কৃষকপুত্র’ প্যাটেলকে বিজেপি যে ভুয়ো সম্মান করে, দেশবাসীকে তা বোঝাতে সামনে আনা হবে অন্নদাতাদের প্রতি মোদি সরকারের প্রতারণা, অবহেলার বিভিন্ন উদাহরণ। রীতিমতো এই সংক্রান্ত প্রস্তাবনা পাশ করা হল।
বর্ধিত কর্মসমিতির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের প্রথমসারির ১৫৮ জন নেতা। অনুপস্থিত ৩৫ জনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। যদিও কংগ্রেসের বক্তব্য, অনেক আগে থেকেই বিদেশে তাঁর কিছু ব্যক্তিগত কাজ ছিল। সভাপতির কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই দলীয় কর্মসূচিতে অনুপস্থিত আছেন তিনি। যদিও অনুপস্থিত ব্যক্তির নাম যখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, তখন স্বাভাবিক নিয়মেই উঠছে প্রশ্ন। ঠিক যেমন প্রশ্ন উঠছে কেন সর্দার প্যাটেলকে পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে নামতে এত সময় লেগে গেল কংগ্রেসের?
আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ১৫০ আসনে প্রার্থী দিক কংগ্রেস। একা বা একান্ত প্রয়োজনে কারও সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে হলেও জোটবদ্ধভাবে যেন ২৯৪ আসনেই থাকে কংগ্রেসের অস্তিত্ব। সুত্রের খবর অনুযায়ী, হাইকমান্ডের কাছে এই বার্তা পৌঁছনো হয়েছে প্রদেশ কংগ্রেসের তরফে। যদিও এত সংখ্যক আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা বাংলা কংগ্রেসের আছে কিনা, তা নিয়ে পরবর্তীতে সংশয় প্রকাশ করেছেন কর্মসমিতির এক প্রবীণ ও প্রথমসারির নেতা। এর পাশাপাশি কলকাতা থেকে দু’ হাজার কিলোমিটার দূরের শহরে হাইকমান্ডের বৈঠকে মাঝেমধ্যেই এল কলকাতা ও বাংলা সংক্রান্ত নানা প্রসঙ্গ। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, আর জি কর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে কর্মসূচিতে আসুন রাহুল-প্রিয়াঙ্কা। বর্ধিত কর্মসমিতিতে এই প্রস্তাব দিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের বর্তমান ও প্রাক্তন সভাপতি শুভঙ্কর সরকার ও অধীর চৌধুরি। দেশজুড়ে যেভাবে বেকারত্ব বাড়ছে, এই বিষয়কে হাতিয়ার করে রাহুল গান্ধীকে ফের ভারত জোড়ো যাত্রায় নামার প্রস্তাব দিয়েছেন বঙ্গ প্রদেশ সভাপতি। তাঁর প্রস্তাব, এবার রেলপথে বেকার যুবদের ইস্যু নিয়ে দেশভ্রমণে বার হোন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি। সরাসরি নাম না করা হলেও ওঠে প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রসঙ্গ। সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যতম সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ বলেন, “বিজেপি নেতৃত্বকে জিজ্ঞেস করলে ওরা বলে যে, গান্ধী না গডসে কাকে সমর্থন করা উচিত তা নিয়ে ভাবতে হবে। তাদের হাত থেকে তো দেশকে রক্ষা করতেই হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.