ফাইল ছবি।
সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: মহিলা সংরক্ষণ বিল সংসদে পাশ করিয়ে চমক দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকার। যদিও এই আইন কবে থেকে তা কার্যকর হবে, তার কোনও সদুত্তর এখনও নেই কেন্দ্রের কাছে। তবে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপিকে চাপে রাখতেই ন্যূনতম ৩৩ শতাংশ আসনে মহিলা প্রার্থী দিতে চলেছে কংগ্রেস। যা বেড়ে ৪০ শতাংশও হতে পারে বলেই কংগ্রেস (Congress) হাইকমান্ড সুত্রের খবর।
এই ধরনের কোনও আইন আসার অনেক আগে থেকেই মহিলাদের সম্মান জানিয়ে আসছে তৃণমূল কংগ্রেস। বর্তমানে লোকসভায় তৃণমূলের জয়ী সাংসদদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ ও রাজ্যসভায় নতুন সাংসদরা চলে এলে তৃণমূলের প্রায় ৩৮ শতাংশই হবেন মহিলা। একই ছবি বিধানসভার ক্ষেত্রেও। এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে আসন্ন নির্বাচনে লাগু হচ্ছে না নয়া সংরক্ষণ। এই বিষয়েরই ফয়দা তুলতে চাইছে কংগ্রেস। মহিলাদের জন্য ন্যূনতম এক তৃতীয়াংশ আসন বরাদ্দ করে তারা এক ঢিলে একাধিক পাখি মারতে চাইছে।
প্রথমত, তারা বোঝাতে চাইছে যে, দেশের নারীদের বাস্তবিক সম্মান দিতে চায় কংগ্রেস। বিজেপি শুধুই কাগজে কলমে সম্মান দেওয়ার রাজনীতি করে। দ্বিতীয়ত, চাপে ফেলতে চাইছে ‘পুরুষকেন্দ্রিক’ দল বিজেপিকে। তৃতীয়ত, আইন কার্যকর না হলেও নারীদের জন্য আসন সংরক্ষিত করে অসংরক্ষিত কেন্দ্রের মহিলা ভোটব্যাঙ্কেও প্রভাব ফেলতে চাইছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। আপাতত যা খবর, তাতে কংগ্রেস যে আসনগুলিতে লড়াই করবে, তার এক তৃতীয়াংশতে মহিলা প্রার্থী দেওয়া হবেই। যদিও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নাকী চাইছেন, এই সংরক্ষণকে আরও বাড়াতে। জাতীয় মহিলা কংগ্রেসের নবনিযুক্ত সভানেত্রী অলকা লাম্বা এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “দেখুন ওরা (বিজেপি) শুধু মুখেই মহিলাদের সম্মানের কথা বলে। হাথরস থেকে শুরু করে বহু ক্ষেত্রে তা প্রমাণিত। দল ঠিক করেই রেখেছে এক তৃতীয়াংশ আসনে মহিলা প্রার্থী দেওয়া হবে। যদিও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী চাইছেন তা ৪০ শতাংশ বা তারও বেশি করতে। দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কী হয়।” এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, উত্তরপ্রদেশের শেষ বিধানসভা নির্বাচনে পদাধিকার বলে দলের দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিয়াঙ্কা গান্ধী (Priyanka Gandhi)। স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘লড়কি হুঁ, লড় সকতি হুঁ’। যদিও তাতে সাফল্য আসেনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের সেপ্টেম্বরে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে পাশ হয় মহিলা সংরক্ষণ বিল নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম। সংবিধানের ১২৮তম সেই সংশোধনীতে ঠিক হয়েছে লোকসভা ও বিভিন্ন বিধাসভায় এক তৃতীয়াংশ আসন বরাদ্দ থাকবে মহিলাদের জন্য। যদিও সেই নিয়ম কবে থেকে বাস্তবায়িত হবে, তার কোনও সঠিক দিকনির্দেশ এখনও পর্যন্ত করতে পারেনি নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকার। বিলে বলা হয়েছিল, পরবর্তী জনগণনা এবং সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর থেকে লাগু হবে এই আইন। যা নিয়ে সেই সময় থেকেই তীব্র প্রতিবাদ জানান বিরোধী সাংসদরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, শুধুমাত্র নির্বাচনী চমক দিতে, সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে দিশাহীন এই বিলকে আইনে পরিণত করা হয়েছে। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেত্রী জয়া ঠাকুর সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছেন। যেখানে সর্বোচ্চ আদালতের কাছে তিনি আবেদন করেছেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচন থেকেই এই আইন কার্যকরী করা হতে। ২২ জুনের শুনানিতে কেন্দ্রকে এই বিষয়ে নিজেদের মতামত জানাতে দু’ সপ্তাহের সময়ও ধার্য করেছে বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ও বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের বেঞ্চ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.