সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দলের সভাপতি পদ ছাড়ার সিদ্ধান্তে এখনও অনড় রাহুল গান্ধী। নতুন নেতা খোঁজার নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকে। দলের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, সোনিয়া গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ওয়াধেরাও নাকি রাহুলের সিদ্ধান্ত মানছেন। সোমবার রাতের খবর অনুযায়ী আগামী চার দিনের মধ্যে ফের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকার পরিকল্পনা করছে কংগ্রেস। সেখানেই দলের সভাপতি পদে রাহুল গান্ধীর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। দলীয় সূত্রে খবর, বৈঠকে আরও একবার রাহুলকে তাঁর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বলবেন কং নেতারা। যদিও তাতে কতটা কী কাজ হবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
এদিকে মোদি-সুনামির জেরে পরাজয়ের দায় কাঁধে নিয়ে রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস প্রধানরা পদ ছাড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করছেন। সেই ধারা মেনেই সোমবার তিনজন হেভিওয়েট নেতা দল ছাড়লেন। ঝাড়খণ্ড কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অজয় কুমার, অসমের রাজ্য সভাপতি রিপুন বোরার পর পাঞ্জাব কংগ্রেস সভাপতি সুনীল জাখর রাহুল গান্ধীকে নিজের ইস্তফা পত্র তুলে দেন। এদিকে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা রাধাকৃষ্ণ ভিখে পাতিলও বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন। পরিস্থিতি জটিল হয়েছে রাজস্থানেও। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট দলের জয়ের চাইতে পুত্রের জয়কে বেশি গুরত্ব দিয়েছেন বলে দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে মন্তব্য করেছিলেন রাহুল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন রাজস্থানের কয়েকজন মন্ত্রী এবং বিধায়ক রাজ্যে কংগ্রেসের ভরাডুবির জন্য কার দায়, তা চিহ্নিত করা এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন।
পাঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সুনীল জাখর নিজে গুরদাসপুর লোকসভা আসন থেকে বিজেপি প্রার্থী সানি দেওলের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়ে পরাজিত হয়েছেন। অসমে ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে মাত্র তিনটিতে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। ঝাড়খণ্ডে ১৪টি লোকসভা আসনের মধ্যে কেবল মাত্র একটি আসনেই জয়লাভ করতে পেরেছে কংগ্রেস। আর বিজেপি সেখানে ১১টি আসন দখল করেছে। এই কারণেই এই তিন রাজ্য থেকে কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতিরা ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। তাঁরা সকলেই নির্বাচনে ভরাডুবির দায় নিজেদের কাঁধে নিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেই আরও তিন প্রদেশ সভাপতি অশোক চৌহান, রাজ বব্বর আর কমলনাথ পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ করেন।
তবে এতকিছুর মধ্যেও প্রশ্ন একটাই, দলের জাতীয় সভাপতি হিসাবে রাহুল গান্ধী কোনপথে হাঁটবেন? শোনা যাচ্ছে, তাঁকে কংগ্রেস ধরে রাখার জন্য নতুন একটি পদ তৈরি করতে চলেছে। ভোটের ফল প্রকাশের পাঁচদিন পরেও পরাজয়ের ‘আকস্মিকতা’ কাটিয়ে উঠতে পারেনি কংগ্রেস। ফলপ্রকাশের দিন ছোট সাংবাদিক সম্মেলনের পর আর সামনে আসেননি রাহুল। নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আক্রমণ করা রাহুল এর মধ্যে টুইটারে আর কোনও রাজনৈতিক পোস্টও করেননি। বাতিল করা হয়েছে তাঁর সমস্ত রাজনৈতিক কর্মসূচি। এমনকী, দলের নবনির্বাচিত সাংসদদের সঙ্গে দেখা করতেও রাজি হননি রাহুল। দুই বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আহমেদ প্যাটেল এবং কে সি বেণুগোপালের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দিষ্ট করে তিনি তাঁর ইস্তফার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে খবর।
লোকসভা ভোটে বিপর্যয়ের পর শনিবার দলের কার্যকরী কমিটির বৈঠকেই কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটি তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি। বরং দলের দুঃসময়ে এবং লোকসভা ভোটে মোদি তথা বিজেপিকে তিনিই একমাত্র চাপে ফেলতে পেরেছেন বলে রাহুলকে দলের সভাপতি পদে কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন ওয়ার্কিং কমিটির নেতা-নেত্রীরা। এমনকী, সোনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কাও তাঁকে বুঝিয়ে তখনকার মতো নিরস্ত করেন। কিন্তু কংগ্রেসের এক নেতা জানিয়েছিন, সভাপতি পদ ছাড়তে রাহুল প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি কেবল নতুন নেতা নির্বাচন পর্যন্ত দায়িত্বভার সামলে যাবেন। রাহুলের এই অনমনীয় অবস্থান বুঝেই তলে তলে পরবর্তী পদক্ষেপও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সূত্রে খবর। পরবর্তী কংগ্রেস সভাপতি কে হবেন, তা নিয়েও দলের অন্দরে শুরু হয়েছে জল্পনা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.