বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, নয়াদিল্লি: গতবার কানের পাশ দিয়ে চলে যায় ক্ষমতার রদবদল। আসন বন্টন নিয়ে কংগ্রেসের একগুয়েমির কারণে বিজেপির সমর্থনে সরকার গড়েন নীতিশ কুমার। সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি নয়। সব জটিলতা কাটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নীতিশ কুমারের নেতৃত্বাধীন বিহারের এনডিএ জোটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একমত হল কংগ্রেস ও আরজেডি। তাই ভোটের প্রায় আট মাস আগে আসন বন্টন নিয়ে দু’পক্ষের মধে শুরু হয়ে গেল বৈঠক। মঙ্গলবার দিল্লিতে মুখোমুখি বৈঠকে বসেন আরজেডির তেজস্বী যাদব ও কংগ্রেসের মল্লিকার্জুন খাড়গে ও রাহুল গান্ধী। এরপর বামেদের সঙ্গে আলোচনা করে আসন বন্টন চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান আরজেডি সাংসদ মনোজ ঝাঁ।
চলতি বছরের নভেম্বরে রাজ্যে বিধানসভার ভোট। এত তাড়াতাড়ি আসন নিয়ে আলোচনা অতীতে হয়নি। দিন দশ আগে পাটনায় গিয়ে রাজ্য কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে বিধানসভার ভোট নিয়ে একদফা করে কথা বলে এসেছেন রাহুল। রাজ্যস্তরেও কংগ্রেস ও আরজেডি নেতাদের কয়েক দফা কথা হয়েছে। সেই আলোচনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবারের বৈঠকের আয়োজন করা হয়। আরজেডি সূত্রের খবর, বিশেষভাবে আলোচনা হয় ২০২০-র আসন ভাগাভাগির ফর্মুলা নিয়ে। লালুপ্রসাদের দল রাজ্য কংগ্রেসের নেতাদের সাফ জানিয়ে দিয়েছে, জয়ের ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে হাত শিবির যেন আসন দাবি না করে। ২০২০-র বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস ৭০ আসনে লড়াই করে জিতেছিল মাত্র ১৯টি। কংগ্রেসের ওই ফলের কারণেই গতবার আরজেডির নেতৃত্বাধীন মহাগঠবন্ধন ক্ষমতায় ফিরতে পারেনি। শরিক দলগুলি অভিযোগ করে কংগ্রেস জোর করে ৭০টি আসনে লড়াই করে জোটের ভরাডুবির কারণ হয়েছে। এত আসনে লড়াই করার মতো শক্তি দলের ছিল না। তবে এবারও হাত শিবির ৭০ আসনে প্রার্থী দিতে চায়। সূত্রের খবর, খাড়গে-রাহুলদের সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়েই নিষ্পত্তি চান তেজস্বী। কংগ্রেসের এত আসনে লড়াই করার মতো সাংগঠনিক শক্তি ও জনভিত্তি নেই, দাবি করেন তেজস্বী।
যদিও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বদল এবং কিছু আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে হাত শিবির ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বিহারে কংগ্রেসের অবস্থা আগের তুলনায় ভালো বলে দাবি করেন খাড়গে। রাহুল গান্ধী নিজেও বেশ কয়েকবার বিহার সফর করেছেন। আগামী ২০ এপ্রিল খাড়গে ফের সভা করবেন বিহারের বক্সারে। আরজেডি, কংগ্রেস-সহ মহাগঠবন্ধনের দলগুলি আশা করছেন বিহারে নীতীশ কুমারকে নিয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে বিরোধীদের ক্ষমতায় ফেরার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে। ওয়াকফ বিল নীতীশের পার্টি জনতা দল ইউনাইটেড সমর্থন করায় দলে বিদ্রোহের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। মোট পাঁচজন মাঝারি মাপের নেতা দল ছেড়েছেন। তাঁদের তিনজন মুসলিম, দু’জন ওবিসি নেতা।
বৈঠকে ঠিক হয়েছে ওয়াকফ ছাড়াও অসুস্থ নীতীশ কুমারকে সামনে রেখে বিজেপি রাজ্য চালাচ্ছে এবং ক্ষমতায় টিকে গেলে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীর পদ দাবি করবে বলে জোর প্রচার চালানো হবে। এমন অনুকূল পরিস্থিতিতে আরজেডি কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরি করেছে তারা যেন জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত আসনগুলিতেই শুধু প্রার্থী দেয়। ২০২০-এর পুনরাবৃত্তি যেন কিছুতেই না করে। এখন দেখার বিহার প্রদেশ কংগ্রেসের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে তেজস্বীর কথায় সায় দেন কিনা খাড়গে ও রাহুলরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.