বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: দুর্গাপুজোর সময় কলকাতার কলেজ স্কোয়ারের মণ্ডপে অষ্টমী বা নবমীর অঞ্জলি দিচ্ছেন। হঠাৎ দেখলেন, পাশে দাঁড়িয়ে অঞ্জলি দিচ্ছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এমন দৃশ্য দেখলে চমকে যাবেন না। বলা যায় না, আপনার কপালে জুটে যেতে পারে রাহুলের সঙ্গে সেলফি তোলার সুযোগও। দুর্গাপুজোর সময় কলকাতায় এসে অষ্টমীর অঞ্জলি ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। শনিবার দিল্লির তুঘলক লেনের বাসভবনে প্রদেশ কংগ্রেসের নবনিযুক্ত সভাপতি সোমেন মিত্র ও নবগঠিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে রাহুল পুজোয় কলকাতা আসার বিষয়ে কথা বলেন বলে জানা গিয়েছে।
[শহরে ফের অঙ্গদানের নজির, দাতা ও গ্রহীতা দু’জনই এই রাজ্যের]
বৈঠকের পর সোমেনবাবুর তরফে জারি করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও রাহুলের কলকাতা আসার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ‘সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি আসন্ন শারদোৎসব চলাকালীন একদিন বাংলায় আসবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’ জানা গিয়েছে, বৈঠক চলাকালীন দলের কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান অমিতাভ চক্রবর্তী রাহুলকে দুর্গাপুজোর সময় কলকাতায় এসে অঞ্জলি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তাতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেন রাহুল। পুজোর সময় তাঁর মধ্যপ্রদেশে কর্মসূচি রয়েছে। তা সত্ত্বেও সময় করে তিনি কলকাতায় আসতে চান বলেই প্রদেশ নেতাদের বার্তা দিয়েছেন। রাহুলকে কেন দুর্গাপুজোর সময়েই কলকাতায় আমন্ত্রণ করলেন? প্রশ্ন করা হলে অমিতাভ বলেন, “দুর্গাপুজো বাঙালিদের জন্য একটা বিশেষ ব্যাপার। আর বহু আগে ২০১০ সালে যুব কংগ্রেস সভাপতি থাকার সময় রাহুলজিকে দুর্গাপুজোয় কলকাতায় আসতে বলেছিলাম। সেই বিষয়টা মাথায় ছিল। উনি পুজোতে কলকাতায় আসার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে দিনক্ষণ এখনও চূড়ান্ত হয়নি।”
প্রদেশ নেতৃত্বের তরফে দলের সভাপতিকে দুর্গাপুজোয় আমন্ত্রণের বিষয়টি খুবই সাধারণ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে ঠিকই। তবে রাহুলের তাতে প্রায় রাজি হওয়ার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। গত বছর ডিসেম্বরে গুজরাত নির্বাচনের সময় থেকেই সোমনাথ মন্দিরে পুজো দিয়ে নিজেকে শিবভক্ত হিন্দু হিসেবে সকলের সামনে তুলে ধরেছিলেন রাহুল। তারপর থেকে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে রাহুলের মন্দির সফর চলছেই। তা সে কর্নাটকের বিধানসভা নির্বাচন হোক বা বর্তমানের নির্বাচনমুখী রাজ্য মধ্যপ্রদেশ। নির্বাচনী প্রচারের জন্য রাজ্য সফরে গিয়ে মন্দিরে মন্দিরে পুজো দিতে ভুলছেন না কংগ্রেস সভাপতি। এই তালিকায় সম্প্রতি সবচেয়ে বড় সংযোজন তাঁর কৈলাস ও মানস সরোবর যাত্রা। আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঠেকানোই তাঁর প্রধান লক্ষ্য বলে বারবারই ঘোষণা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। সেই লক্ষ্যপূরণের জন্যই কংগ্রেস বিজেপির পাল্টা হিসেবে নরম হিন্দুত্বের রাস্তা নিচ্ছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। আর সেই রণকৌশলের অঙ্গ হিসেবেই রাহুল সভাপতি হিসেবে প্রথমবার বাংলা সফরের জন্য দুর্গাপুজোকে বেছে নিতে চলেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পুজোর সময় দেশের সমস্ত প্রান্ত তো বটেই, বিদেশ থেকেও বাঙালিরা রাজ্যে আসেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের মন জয় করার জন্য দুর্গাপুজোর থেকে ভাল সুযোগ আর কিছু হতে পারে না। কংগ্রেস সভাপতির তরফে সেই অঙ্কই ভালোভাবে কষা হয়েছে বলে ধারণা ওয়াকিবহাল মহলের।
[গাড়ি না থামানোয় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীকে গুলি, কাঠগড়ায় যোগীর রাজ্যের পুলিশ]
এদিনের বৈঠকে মূলত রাজ্যে সংগঠন মজবুত করার বিষয়ে এবং আগামিদিনে জোট গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। সোমেনবাবুর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বৈঠকে উপস্থিত সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী জানান যে, পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করাই তাঁর অন্যতম লক্ষ্য। আত্মমর্যাদা বিসর্জন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস কারেও সাথে নির্বাচনী আঁতাতে যাবে না। এবং নির্বাচনী সমঝোতা ও জোটের ব্যাপারে রাজ্য কংগ্রেসের মনোভাব ও সিদ্ধান্তই অগ্রাধিকার পাবে।’ বৈঠকে রাজ্যের এআইসিসি-র পর্যবেক্ষক গৌরব গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেসের প্রচার কমিটির চেয়ারম্যান অধীররঞ্জন চৌধুরি, কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য, চারজন নতুন কার্যনির্বাহী সভাপতি দীপা দাশমুন্সি, আবু হাসেম খান চৌধুরি, শঙ্কর মালাকার, নেপাল মাহাতো, ইস্তেহার কমিটির চেয়ারপার্সন অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ হাজির ছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.