সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: আসন সমঝোতার জট একান্তই না খুললে দিল্লি, পাঞ্জাব, পশ্চিমবঙ্গের মতো বেশ কিছু রাজ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ করার চিন্তাভাবনা কংগ্রেসে।
দিল্লি ও পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি এবং পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী আসন পাওয়া যাবে না, এমনটাই ধরে নিচ্ছে দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের বৃহত্তম শরিক হিসাবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আপ, তৃণমূল-সহ বাকি দলগুলির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরও যদি দেখা যায় ঐকমত্য আসছে না, সেক্ষেত্রে কেরল মডেলকে সামনে রেখে নির্বাচনে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই করে ইউপিএ আমলের মতো ‘নির্বাচন পরবর্তী জোট’ তৈরির পরিকল্পনা তৈরি রাখছে কংগ্রেস।
এ প্রসঙ্গে কলকাতায় তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge) বলছেন, এজেন্সির তৎপরতা বাড়বে। আর এখানে অধীর চৌধুরী ও সিপিএম দ্বিচারিতা করছে। আমাদেরকেও এই গোটা বিষয়টা দেখতে হবে। যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ তো কাজ না করেই করেই অভ্যস্ত। এদের জন্যই তো বাংলার ওয়ার্ক কালচারের বদনাম ছিল ৩৪ বছর ধরে।”
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মুম্বইয়ের বৈঠকেই ইঙ্গিত মিলেছে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসকে দু’টির বেশি আসন ছাড়তে নারাজ তৃণমূল। অন্যদিকে দিল্লি ও পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ) বিধানসভা নির্বাচনের অনুপাতে আসন সমঝোতা করতে চাইছে। সে ক্ষেত্রে দিল্লিতে কংগ্রেসের ভাগ্যে একটি আসনও জুটবে না। আবার পাঞ্জাবের ১৩টির মধ্যে দুই থেকে তিনটি আসন ছাড়তে পারে আপ। মাত্র সাত আসনের দিল্লি নিয়ে অত বেশি মাথা না ঘামালেও পাঞ্জাবে এত কম আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে না কংগ্রেস।
দিল্লির আম আদমি পার্টি বিরোধী ভোট তাদের ও বিজেপির মধ্যে ভাগাভাগি হলেও পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে তার পুরোটাই আসবে কংগ্রেসে, এমনটাই বিশ্বাস ২৪, আকবর রোডের। তাই তাদের বিকল্প প্রস্তাব থাকবে গত তিনটি, অর্থাৎ ২০১৭ ও ২০২২ বিধানসভা এবং ২০১৯ লোকসভায় প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে হোক আসন সমঝোতা। ১১৭ আসনের পাঞ্জাব বিধানসভার শেষ দুই নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৭৭ ও ১৮টি আসন। আপের ঝুলিতে এসেছিল ২২ ও ৯২টি। গত লোকসভায় ১৩টির মধ্যে কংগ্রেস ও আপ জিতেছিল আটটি ও একটি কেন্দ্রে।
সোমবার কংগ্রেসের সদর দপ্তর থেকে যা কানাঘুষো শোনা গেল তাতে কোনওভাবেই আম আদমি পার্টির থেকে মাত্র দু’-তিনটি আসন নেবে না কংগ্রেস। একইভাবে আবার বাংলাতেও তৃণমূলের দু’টি আসন ছাড়ার প্রস্তাবে একেবারেই খুশি নয় তারা। জাতীয় রাজনীতিতে ইউপিএ (UPA) আমল থেকেই বামেদের পাশে পেয়েছে কংগ্রেস। সেক্ষেত্রে বাংলায় তৃণমূল ও বাম– দুই শক্তিকে একসঙ্গে পাওয়া যাবে, এই আশাও খুব একটা করছে না সংখ্যার নিরিখে দেশের বৃহত্তম বিরোধী দল। সব মিলিয়ে দিল্লি, পাঞ্জাব ও বাংলায় শাসকদলগুলির সঙ্গে হয়তো একসঙ্গে বিজেপি বিরোধী লড়াই করা যাবে না, এই দেওয়াল লিখন একটু একটু করে দেখতে পাচ্ছে গান্ধী, খাড়গেদের দল। দলের সর্বভারতীয় স্তরের এক নেতার মতে, “আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চাইব বিজেপি বিরোধী শক্তি একসঙ্গেই লড়ুক। একান্ত না হলে কী আর করার আছে! সে ক্ষেত্রে বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই করে নির্বাচন পরবর্তী জোটের পরিকল্পনা নিতে হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.