সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কমবেশি প্রায় ৬৫ বছর দেশকে শাসন করেছে কংগ্রেস। বছর চারেক আগেও দেশের বেশিরভাগ ভূখণ্ড ছিল দেশের সবচেয়ে পুরনো দলের শাসনাধীনে। অথচ ক্ষমতা হারানোর চার বছরের মধ্যেই নাকি প্রবল অর্থসংকটে ভুগছে রাহুল গান্ধির দল। একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত পাঁচ মাস ধরে দলের রাজ্য শাখাগুলিতে টাকা পাঠাতে পারছে না এআইসিসি। ফলে রাজ্য দপ্তরগুলিতে রীতিমতো অর্থসংকট। এমনকি অফিসের কর্মীদের মাইনেও সময় মত দিতে পারছে না প্রদেশ কমিটিগুলি । এরাজ্যেও একই পরিস্থিতি। টাকার অভাবে ভোটের প্রচারেও পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে বিজেপির থেকে। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি রাজ্যের নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রচার চলাকালীন অর্থসংকট চূড়ান্ত রূপ নিয়েছিল। এক সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতার দাবি, উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে প্রচারে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিটের টাকাও যথাসময়ে দিতে পারেনি এআইসিসি।
কিন্তু দেশের প্রথম সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলের এহেন অর্থনৈতিক সংকটের কারণ কী? রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের শোচনীয় ফলাফলই এর জন্য দায়ী। নির্বাচনের পর কংগ্রেসকে ছেড়ে বিজেপির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বড় বড় কর্পোরেট সংস্থা থেকে যে বিপুল পরিমাণ চাঁদা আসত তা প্রায় বন্ধ। তাছাড়া ১৪’র নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যগুলিতেও ক্ষমতা হারাতে শুরু করেছে হাত শিবির। বিজেপি যখন ২১টি রাজ্যে শাসন করছে তখন কংগ্রেস গুটিয়ে গেছে ৩টে ছোট রাজ্যের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই কমছে আয়। এদিকে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নগদে চাঁদা নেওয়া বন্ধ। চাঁদা দিতে গেলে দিতে হচ্ছে ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে। বিজেপির তুলনায় ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে কংগ্রেসের প্রাপ্ত চাঁদার পরিমাণ নিতান্তই নগণ্য। এডিআরের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭ সালে বিজেপির রোজগার ছিল ১০৩৪ কোটি। সেখানে কংগ্রেসের আয় ছিল মাত্র ২২৫ কোটি টাকা। যা ২০১৬ সালের তুলনায় ১৪ শতাংশ কম। সর্বভারতীয় স্তরে দল চালানোর জন্য এই পরিমাণ টাকা যথেষ্ট নয় বলেই মনে করছে কংগ্রেস নেতারা।
সমস্যা মেটাতে দলের শীর্ষনেতাদের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের তরফে নেতাদের আরও বেশি চাঁদা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। চেষ্টা করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় রোজগার বাড়ানোর। সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন জানানো হচ্ছে যাতে চাঁদা দেওয়ার পরিমাণ বাড়ানো যায়। খরচ কমানোর জন্য যাতায়াতের খরচ কমাতে বলা হয়েছে সর্বভারতীয় নেতাদের। এমনকি দলীয় কার্যালয়ে অতিথিদের চা-জলখাবারের খরচও কমাতে বলা হয়েছে। বিজেপি যেখানে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে ঝাঁ চকচকে দলীয় কার্যালয় তৈরি করে ফেলেছে, সেখানে অর্থাভাবে পার্টি অফিসের কাজে হাত লাগাতে পারেননি রাহুল গান্ধিরা।
সামনেই ২০১৯ নির্বাচন। বিরোধী দলগুলিকে একত্রিত করে মোদি সরকারকে উৎখাত করার ডাকও দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। কিন্তু ভোটের আগে এহেন অর্থসংকট সামলে প্রচারে মোদিকে কতটা টক্কর দিতে পারবে কংগ্রেস, সন্দিহান রাজনৈতিক মহল। তাছাড়া বিজেপি যেভাবে প্রচারের বেশিরভাগ আলো দখল করে বসে আছে তাতে এমনিতেই বেশ চাপে কংগ্রেস। এর মধ্যে আবার নতুন করে অর্থসংকট তৈরি হলে ভোটের লড়াইটা অসম হয়ে যাবে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। কংগ্রেস নেতারা অবশ্য দাবি করছেন, প্রচারের টাকা না থাকলেও মানুষ তাঁদের সঙ্গেই আছেন। আর লোকবলে ভর করেই ২০১৯-এ দেশের প্রতিটি কোণে পৌঁছে যাবেন তাঁরা। তাছাড়া দেশজুড়ে যে মোদি-বিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে তা যদি আগামিদিনে আরও প্রবল হয় তাহলে ফের বিজেপির বদলে কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকতে পারে কর্পোরেটরাও। আপাতত সেই আশাতেই থাকতে হবে রাহুল গান্ধিকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.