ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: বঙ্গে একা লড়াই। আর তার জন্য ২০টা আসন! বুধবার এআইসিসি (AICC) সদর দপ্তরের বৈঠকে প্রদেশ নেতাদের এই ‘অযৌক্তিক’ কথা শুনে প্রথমে হেসে শেষে প্রবল ক্ষোভ প্রকাশ করে রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) প্রশ্ন, ‘বাস্তবসম্মত কথা বলুন। কলকাতা থেকে ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে বাংলায় দলের কজন বিধায়ক আছেন?’ তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস যে জোট করতে চলেছে সেই বার্তা দিয়েই এ রাজ্যে দলের ভোট শতাংশ সামনে রেখে এর পরই একেবারে বাস্তবসম্মত আলোচনা করে যান রাহুল। ‘অযৌক্তিক’ হলেও বাংলা থেকে যাওয়া প্রত্যেক নেতার কথা তিনি শুনেছেন এবং শেষে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, “বিজেপিকে হারানো ছাড়া দ্বিতীয় কোনও লক্ষ্য নেই। সংগঠনের কাজ করুন। দলের কর্মী চাই।”
ঘণ্টা দেড়েকের বৈঠকে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী-সহ (Adhir Ranjan Chowdhury) বাংলা থেকে ১৫ জনের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সূত্রের খবর, রাহুল প্রথমেই সতর্ক করে দেন, কেউ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একই কথা বলবেন না। প্রদেশ নেতা আব্দুস সাত্তার, শুভঙ্কর সরকার, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, আজাহার মল্লিক, রাসু দত্ত, দীপা দাশমুন্সি (Deepa Dashmunsi), নেপাল মাহাতো-সহ আরও কয়েক জন বলার পর অধীর চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। প্রত্যেকে একা লড়াইয়ের কথা বলেন। রাহুল ছাড়া সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে (Mallikarjun Kharge), সাধারণ সম্পাদক কেসি বেনুগোপাল ও এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক এ চেল্লাকুমার ছিলেন বৈঠকে। প্রদেশের দাবি শুনে শুরুতেই রাহুল প্রশ্ন করেন, ‘কত আসনে লড়ার ভেবেছেন? তখনই রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে ২০ আসন দাবি করে বসেন নেতারা। হাসতে হাসতে রাহুল প্রশ্ন করেন, ‘দলের কত শতাংশ ভোট আছে বাংলায়? ২০টা আসনের কথা বলছেন? কলকাতা বাংলার রাজধানী। তার ৩০০ কিলোমিটারের মধ্যে কজন বিধায়ক আছেন?’ শোনার পরই সমঝে যান প্রদেশ নেতারা। ২০ থেকে আসনের দাবি ১২-তে নামে। রাহুলের আরও বক্তব্য ছিল, ‘গোল গোল কথা বলবেন না। বাস্তব ছবিটা বলুন।’
একলা চলোর সওয়াল শুনেই রাহুল হাত তুলে জানাতে বলেন কে কোন পক্ষে? একলা চলো নাকি জোট? সূত্রের খবর, সেবা দলের সভাপতি রাহুল পাণ্ডে পরিস্থিতি বুঝে শুরুতেই জোটের কথা বলে দেন। যুব সভাপতি আজাহার আবার রাহুল-প্রিয়াঙ্কাকে কলকাতা তথা রাজ্যে এসে সভা করার আবেদন করেন। রাহুল জানান, ‘আসব। কিন্তু দলকে আগে তৈরি হতে হবে।’ আজাহারের জবাব, আপনার জন্য জান দিয়ে দেব। রাহুলের প্রতিক্রিয়া, ‘জান চাই না, কর্মী চাই।’ প্রাক্তন ছাত্রনেতা আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ও দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের উপর জোর দেন। নেতৃত্ব পাল্টা প্রশ্ন করে, বাংলায় দলের প্রাক্তন ছাত্রনেতা বা বর্তমান ছাত্রনেতারা ছাত্র সংগঠনের কাজ কতটা করেছেন? কী অবস্থা এখন সংগঠনের? আশু বলে দেন, এআইসিসি (AICC) যেমন বলবে সেভাবেই প্রস্তুতি নেবে প্রদেশ।
প্রদেশ সভাপতি রাহুলকে রাজ্যে সংখ্যালঘু ভোটের দিকে তাকিয়ে আসন সমঝোতার দাবি করেন। সঙ্গে দার্জিলিং ও রায়গঞ্জ আসনের জন্য দর কষাকষি করতে থাকেন। বৈঠকে থাকা এক নেতার দাবি, অধীরের দাবিদাওয়া শুনে মুখে হাসি দেখা গিয়েছিল রাহুলের। অধীর তার পরই আইএসএফকে (ISF) সঙ্গী করার দাবি তোলেন। রাহুলের জবাব, ‘শুধু সংখ্যালঘু বা আইএসএফের কথা কেন বলছেন? কংগ্রেস (Congress) শুধু সংখ্যালঘুদের জন্য নয়। সব ধর্মের মানুষের জন্য। আমরা সবাইকে নিয়েই লড়ব।’ বামফ্রন্টের সঙ্গে জোটের কথাও ওঠে। তৃণমূল না বামফ্রন্ট কাদের সঙ্গে জোট হলে দলের কোথায় কতটা লাভ সেই প্রশ্ন করেন রাহুল। পাল্টা পরিসংখ্যান দিতেই ১২ আসনের দাবি তরতরিয়ে ৮-এ নামে। কোন কোন আসন জানতে চাইলে তাঁকে দার্জিলিং, দুই মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, পুরুলিয়ার সঙ্গে রায়গঞ্জ আসনের জন্য জোরালো সওয়াল করেন অধীর। সঙ্গে আরও একটি আসনের দাবি তোলেন। বৈঠকে ছিলেন আরেক প্রদেশ নেতার কথায়, “রায়গঞ্জ তো বুঝলাম। কিন্তু দার্জিলিং নিয়ে এত জোরাজুরি কেন করছেন অধীরবাবু!” সে প্রসঙ্গে কলকাতায় থাকা এক নেতার বক্তব্য, “দার্জিলিং আসনের জন্য বিনয় তামাংকে একপ্রকার কথা দিয়ে ফেলেছেন অধীরবাবু।” বামফ্রন্ট নিয়ে আলাদা করে রাহুলের কোনও আগ্রহ নেই জেনে আলিমুদ্দিনও হতাশ।
আসন সমঝোতার আসনে শেষে দাঁড়ি পড়ে ৭ আসনের দাবিতেই। তবে কোনও আসন নিয়েই রফা চূড়ান্ত হয়নি। এক প্রদেশ নেতার কথায়, “হাইকমান্ড যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ রাজ্যে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার পুরো প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে তা স্পষ্ট। রাহুলজিরা সবটাই ছকে নিয়েছেন। রাজ্যে দলের অবস্থা কে কতটা বাস্তবসম্মতভাবে তাঁকে বলেন, সেটা দেখতে চাইছিলেন।” বৈঠকে কৃষ্ণা দেবনাথ, মায়া ঘোষ, প্রদীপ ভট্টাচার্য, দেবপ্রসাদ রায়, আবদুল মান্নানদেরও আমন্ত্রণ ছিল। প্রদীপবাবু অসুস্থ, দেবপ্রসাদবাবুর সদ্য অস্ত্রপোচার হয়েছে। দিল্লির ঠাণ্ডা এড়াতে চেয়েছেন কেউ কেউ। কিন্তু আবদুল মান্নান প্রদেশ নেতৃত্বের প্রতি তাঁর পুরনো ক্ষোভ থেকেই বৈঠক এড়িয়েছেন। যা জানতে পেরে হাসতে হাসতে রাহুলের প্রশ্ন, ‘আপনাদের সেই ঝগড়া এখনও চলছে?’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.