অভিজিৎ ঘোষ, যোধপুর: শচীন পাইলটের বিবাহ বিচ্ছেদের খবর বেরঙিন রাজস্থান (Rajasthan) ভোটে রামধনুর রং এনে দিয়েছে। এতদিন চর্চা ছিল বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার ব্যক্তিজীবন নিয়ে। রাজপরিবার, তাই দিনের শেষে মানুষ বিশ্বাস করেছে, কিং (পড়ুন কুইন) ক্যান ডু নো রং। ফলে বসুন্ধরার অনুগামীর সংখ্যা খুব একটা কমেনি। এবার বিজেপির (BJP) হাতে শচীনের বিবাহ বিচ্ছদের খবর। বুধবার রাজস্থানের বিভিন্ন পাতা জুড়ে পেজ থ্রি স্টাইলে হরেক রকম স্টোরি। মুচমুচে খাস্তা। কেউ কেউ তো বিধর্মী বিয়ে নিয়ে সমাজতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পর্যন্ত করে ফেলেছেন। কেউ বা শুনলাম শ্রীনগরে ফারুখের বাড়ি সাংবাদিকও পাঠিয়ে দিয়েছেন। শচীনের প্রাক্তন স্ত্রী সারা কোথায়? তা জানতে পাপারাৎজি দলের ঘুম ছুটেছে রাতের। তবে যাই ঘটুক না কেন, জাতপাতের রাজনীতিতে বিশ্বাসী রাজস্থানে শচীনের বিবাহ বিচ্ছেদ সামান্য হলেও প্রভাব ফেলতে বাধ্য।
জাতপাতের লড়াইয়ে ভোটের আগে থেকেই ঘি ঢালতে শুরু করেছে বিজেপি। অগড়ি জাতি, যাদের মধ্যে রাজপুতরা অন্যতম। গতবার কংগ্রেসকে (Congress) হাত খুলে ভোট দিয়েছিল অগড়িরা। এবার পাশা উলটে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। নয় নয় করে ৭৩-৭৫ শতাংশ অগড়ি জাতির ভোট বিজেপির অ্যাকাউন্টে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেখানে কংগ্রেসের ভাগ্যে ১২-১৩ শতাংশের বেশি জুটবে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। পালের হাওয়া বদলের খবর সম্যক আছে কংগ্রেসের কাছে। তাই প্রার্থী নির্বাচনে এবার অসীম সাহস দেখিয়েছে রাজস্থান প্রদেশ কংগ্রেস। চতুর্থ আর পঞ্চম পর্বে মোট ৬১ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে মঙ্গলবার। যার মধ্যে ৩৫ জন নতুন প্রার্থী। বাতিলদের মধ্যে মন্ত্রী ভরোসিলাল জাঠব থেকে শুরু করে বহু পরিচিত বিধায়ক রয়েছেন। তবে গতবারের হেরে যাওয়া আসনে প্রার্থী রদবদলটাই বেশি। শেষ খবর, কম করে ৭ মন্ত্রীকে প্রার্থী করছে না কংগ্রেস।
আর এই রদবদল হতেই কংগ্রেসের ঘরের ঝগড়া বাইরে। অভিজ্ঞ বিধায়ক ভরত সিং কুন্দনপুর এতদিন গেহলটের বিরোধিতা করতেন। ভোটের মাঝমধ্যিখানে এসে গেহলটের মন্ত্রী প্রমোদ জৈনের বিরুদ্ধে সরাসরি দুর্নীতির তোপ দেগেছেন। একইভাবে খিলাড়িলাল বইলবা পাইলট শিবিরের। তিনিও খুলে আম গেহলটের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেছেন। অর্থাৎ একদিকে প্রার্থী না হওয়ার ঝামেলা, অন্যদিকে গেহলট – শচীন লড়াই। দুয়ের জাঁতাকলে কংগ্রেস তার পুরনো চেহারায়। শুধু গোষ্ঠীবাজির জেরেই মধ্যপ্রদেশ লাগোয়া ১২টি আসনে হারার প্রবল সম্ভাবনা কংগ্রেসের।
শেষে একটি আন্তর্জাতিক ও একটি দেশীয় চ্যানেলের যৌথ সমীক্ষার কথায় আসা যাক। তাদের দাবি এবারের ভোটে লড়াই হবে, যাকে বলে নেক টু নেক ফাইট। তবু তার মাঝে ২৫-৩০টা আসন বেশি পাবে বিজেপি। মার্জিন হবে কম ভোটের, ৫ হাজারের কমে। সমীক্ষা সব সময় ঠিক বলে না, এটা যেমন সত্য, তেমনই এটাও ঠিক, একের পর এক সমীক্ষা কেউই কংগ্রেসকে ১০০-র বেশি আসন দিতে পারেনি। রাজস্থান কংগ্রেস বলছে, ও সব বিজেপি টাকা ছড়িয়ে করেছে ভোটারদের প্রভাবিত করতে। মোদির দল টাকা দিয়ে ওদের কিনে নিয়েছে। বিজেপি বলছে, হারের ভয়ে কংগ্রেসের এখন কানে দিয়েছি তুলো, পিঠে বেঁধেছি কুলোর মতো পরিস্থিতি। আর শহুরে রাজস্থানবাসী বলছেন, পাল্লা ভারী বিজেপির। কিন্তু মোদি সরকারের হাজারো জনতা-বিরোধী পদক্ষেপেরও জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত বিজেপি। ফলে লড়াই করেই জমি দখল করতে হবে উভয়পক্ষকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.