সোমনাথ রায়: রাজ্যের বিরোধীরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে যতই ভিক্ষা বলে অপমান করুক, আদতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই জনহিতকর প্রকল্প কতখানি যুগান্তকারী, জম্মু ও কাশ্মীর নির্বাচনেও মিলল তার প্রমাণ। নিজেদের ইস্তেহার প্রকাশে রীতিমতো রণডঙ্কা বাজিয়ে সম্প্রতি জম্মু-কাশ্মীরের মহিলাদের ‘ভিক্ষা’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন দুই দলের দুই শীর্ষনেতা অমিত শাহ এবং মল্লিকার্জুন খাড়গে। রাজ্যে কটাক্ষ ও ভিনরাজ্যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে সামনে রেখে বৈতরণী পার হওয়ার এই প্রয়াসকে কটাক্ষ করতে ছাড়লেন না তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। বললেন, “ওরাই বার বার প্রমাণ করে দেয়, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার একটা মডেল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা তৈরি করেছেন। আর ওঁরা নকল করেন।”
৬ সেপ্টেম্বর জম্মুর নাগরোটা বাইপাসে চান্নি হিম্মত চকের ধারে এক বিশাল তিন তারা হোটেলের ওয়ার রুমে জম্মু-কাশ্মীরের ইস্তেহার প্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যেখানে পরিবারের বয়স্কতম মহিলাকে বছরে ১৮ হাজার টাকা করে সরাসরি নগদ হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজেপি। একইভাবে ১১ সেপ্টেম্বর শ্রীনগরের জনসভা ও সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস সভাপতি পরিবারের প্রবীণতম মহিলাকে মাসিক তিন হাজার টাকা করে দেওয়ার অঙ্গীকার করে গিয়েছেন। এইখানেই উঠছে প্রশ্ন। সমাজমাধ্যমে, পাড়ার আড্ডায়, ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বাংলার বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম কর্মী-সমর্থকরা এবং ক্ষেত্রবিশেষে নেতারাও যখন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো দিগন্তকারী প্রকল্পকে ভিক্ষার সঙ্গে তুলনা করেন, তখন কোন মন্ত্রে বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনের সময় তাঁদেরই শীর্ষনেতারা আশ্রয় নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তৈরি এই প্রকল্পের আড়ালে?
প্রায় সওয়া দু’ হাজার কিলোমিটার দূরে প্রদেশ কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়কে ফোনে ধরতে তিনি বললেন, “আমরা তো কোনওদিন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের বিরোধিতা করিনি। উল্টে বলেছি ৫০০ বা ১০০০ টাকায় আজকের দিনে কিছুই হয় না। বিরোধিতা করবই বা কেন, বিভিন্ন রাজ্যে আমরাও তো এই ধরনের প্রকল্প রূপায়ণের কথা বলেছি। তবে হ্যাঁ, এটা অবশ্যই বলেছি যে, তৃণমূল কংগ্রেস গোয়ায় যেমন ৫ হাজার টাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তেমনই বাংলাতেও করুক। সঙ্গে আমাদের বক্তব্য, শুধু লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দিলেই তো হবে না, বাংলার লক্ষ্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও করতে হবে।” বিজেপির রাজ্যসভা সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “এগুলো তো সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প। মধ্যপ্রদেশে লাডলি বহেনা যোজনা সাফল্যের সঙ্গে চলছে। পার্থক্য হল, আমরা কখনও বলি না যে, আমাদের ভোট না দিলে অনুদান বন্ধ করে দেব। ওরা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে সামনে রেখে ভয় দেখিয়ে ভোট পেতে চায়। আমরা কিন্তু কোনও রাজ্যে এই ধরনের হুমকি দিই নি, দেবও না।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, “বিপন্ন মানুষকে সাহায্য করা তো সরকারের কর্তব্য। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মের আগে থেকে বাংলায় বিভিন্ন ভাতা দেওয়া চালু করেছে বামফ্রন্ট সরকার। তবে আমরা তাকে নিজেদের কর্তব্য বলে মনে করেছি, কখনও সেগুলির বিজ্ঞাপন করিনি। শুধু বাংলায় কেন, অন্য অনেক রাজ্যেও বহুদিন ধরেই এই ধরনের নানা জনহিতকর প্রকল্প চলে।”
রাজ্যের বিরোধী নেতাদের এই বক্তব্যের পাল্টা দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষের বক্তব্য, “রাজ্যস্তরে বিরোধীরা যতই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে হেয় করুক, অপমান করুক, ওদের সর্বভারতীয় নেতারাও জানেন, বোঝেন যে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার একটা যুগান্তকারী মডেল। তাই নির্বাচন এলেই রাজ্যে রাজ্যে ওরা নতুন নতুন নাম দিয়ে এই প্রকল্পের নকল করেন।” সঙ্গে জুড়লেন, “বুঝতে হবে বাংলা একটা বিশাল রাজ্য। এখানে এই প্রকল্পের প্রাপক অনেক বেশি। আমরা শুধু পরিবারের প্রবীণতমাকে নয়, প্রত্যেককে এই প্রকল্পের আওতায় এনেছি। তার উপর বাংলাকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। কেন্দ্র আমাদের প্রাপ্য টাকা দেয় না। তার মাঝেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেষ্টা করেছেন। এই প্রকল্পকে সফল করেছেন। মডেলে পরিণত করেছেন। সেই কারণেই বাংলায় গালমন্দ, অপমান করলেও ওদের শীর্ষনেতৃত্ব বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচন এলেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে নকল করে। অর্থাৎ প্রমাণ করে দেয় এই প্রকল্প কতখানি জনহিতকর। কতখানি যুগান্তকারী।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.