সোমনাথ রায়, নয়াদিল্লি: বিধানসভা নির্বাচনের আর এক মাসও বাকি নেই। এখনও গোষ্ঠীকোন্দল মুক্ত হতে পারল না রাজস্থান (Rajasthan) কংগ্রেস (Congress)। বৃদ্ধ রাজপুত অশোক গেহলট (Ashok Gehlot), তরুণ তুর্কি শচীন পাইলটের (Sachin Pilot) দ্বন্দ্ব আজ আর কোনও নতুন কথা নয়। যুযুধান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য না এলে যে, মরুঝড়ে ডুবতে হবে, তা বুঝতে ভুল করেননি কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে।
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বারেবারে কথা বলেছেন দুই হেভিওয়েটের সঙ্গে। মাসখানেক আগেও আলাদা আলাদাভাবে দুই নেতাকে বলেছেন, আগে কাঁধ কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে নির্বাচনে জিতুন। পরেরটা পরে হবে। সাংগঠনিক পদের হিসাবে দলের সর্বাধিনায়কের এই আবেদন যে আসলে আদেশ, তা ভালই বুঝেছিলেন গেহলট-পাইলট। তাই ইগোর উপর আপাতত বালি চাপা দিয়েই আসরে নেমেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে প্রার্থী নির্বাচনে শচীনকে বেশ কিছু জায়গায় অপদস্থ করেছেন অশোক। তাতেই যেন ফের প্রকাশ্যে রাজস্থান কংগ্রেসের ফাটল।
কামাঁ কেন্দ্রের বিধায়ক তথা রাজস্থানের শিক্ষা এবং বিজ্ঞান ও কারিগরী দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জাহিদা খানের সঙ্গে জড়িয়েছে দুর্নীতির নাম। সম্প্রতি তাঁর বাড়ির সামনে এক আবর্জনা স্তূপ থেকে উদ্ধার হয়েছে ব্যাঙ্কের নোট বান্ডিল করার বিপুল সংখ্যক টেপ, টাকা জমা করার রসিদ। বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগও উঠেছে গেহলট ঘনিষ্ঠ নেত্রীর বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন ধরেই কংগ্রেসের সদর দফতরের সামনে জাহিদার বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন কয়েকজন। তাঁদের বক্তব্য, দুর্নীতিতে জড়িত জাহিদাকে প্রার্থী করা যাবে না। শুক্রবার হঠাৎ করেই ২৪, আকবর রোডে জমায়েত হন জাহিদাপন্থীরা। কামাঁ কেন্দ্র থেকে জাহিদাকেই প্রার্থী করার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। একটা সময় কংগ্রেস সদর দপ্তরের সামনের লনের দু’দিকে জাহিদা সমর্থক ও বিরোধীদের জিন্দাবাদ-মুর্দাবাদ স্লোগানে কান পাতা দায় হয়ে দাঁড়ায়।
এখানেই থামেনি দ্বন্দ্ব। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আকবর রোডে জড়ো হন জয়পুরের মালব্য নগর কেন্দ্রের কিছু কংগ্রেস সমর্থক। তাঁদের দাবি, অর্চনা শর্মার বদলে সেখান থেকে প্রার্থী করতে হবে মহেশ শর্মাকে। যুক্তি, গত দু’বার এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও বিজেপির (BJP) কাছে ভরাডুবি হয়েছে অর্চনার। সেখানে গত কয়েকবছর মাটি কামড়ে এলাকায় সংগঠনকে মজবুত করেছেন মহেশ। তাই দু’বারের হেরো প্রার্থীর বদলে তাঁকেই প্রার্থী করতে হবে। কংগ্রেস অন্দরমহলের বক্তব্য, শচীন পাইলটও চেয়েছিলেন এমনটা। কিন্তু এখানেও নিজের অনুগত অর্চনাকে প্রার্থী করিয়ে ছেড়েছেন গেহলট। কংগ্রেস হাইকমান্ড বারবার বলে এসেছে, প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কার জেতার সুযোগ কতখানি, তা দেখা হয়েছে। কিন্তু পাইলটপন্থীদের দাবি, অর্চনার থেকে এই বিষয়ে এগিয়ে মহেশ। কারণ দু’দিন আগেই নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধন করতে গিয়ে কেঁদে ভাসিয়েছেন অর্চনা। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “এবারও যদি হারি, আমার রাজনৈতিক জীবন শেষ হয়ে যাবে। তাই আপনারা জানপ্রাণ লাগিয়ে দিন।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.