প্রতীকী ছবি।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্যাঙের ছাতার মতো ইতিউতি গজিয়ে ওঠা কোচিং সেন্টার আর তার সামনে পড়ুয়াদের লম্বা লাইনের দিন এবার হতে চলেছে অতীত। তেমনই নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। কোচিং ক্লাসে কোনও পড়ুয়াকে ভর্তি করতে হলে তার নূন্যতম বয়স হতে হবে ১৬, জানাল কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রক (Ministry of Education)। ‘কোটা’ ফ্যাক্টরি যখন ঘুম কাড়ছে গোটা দেশের, তখনই কেন্দ্রীয় নির্দেশ কিছুটা হলেও স্বস্তির জল ছিটাল অভিভাবকদের উদ্বেগে।
প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য অজস্র কোচিং সেন্টার (Coaching Centre)। তার সঙ্গে অজস্র গালভরা প্রতিশ্রুতি। ভালো নম্বর আর উপরের দিকে র্যাঙ্ক পাওয়ার নিশ্চিত আশ্বাস। দশম শ্রেণির গণ্ডি পার হওয়ার আগে থেকেই এমন অজস্র প্রলোভনের হাতছানিতে সাড়া দিয়ে পড়ুয়ারা নাম লেখান নানা নামী-দামি কোচিং সেন্টারে। পকেটসই হোক কিংবা দামি, বাবা-মায়েরা যে কোনও রকমে এমন সব কোচিং ক্লাসে ভর্তি করিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। আর প্রবেশিকা পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেই দেখা যায় নির্দিষ্ট কোচিং সেন্টার থেকে বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি–সফল পড়ুয়া নাকি ছোটবেলা থেকেই নাম লিখিয়েছিলেন তাঁদের কাছেই। তবে এবার থেকে বন্ধ সে সব। দশম শ্রেণি পাস করার আগে কোনও পড়ুয়াই নাম লেখাতে পারবেন না এমন কোচিং সেন্টারে। সরাসরি বলা না হলেও ইঙ্গিত মিলেছে, বিশেষত প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য কোচিং দেয় যে সমস্ত সংস্থা, সেই সমস্ত কোচিংয়ের কথাই বলা হয়েছে নির্দেশিকায়।
আবার পড়ুয়া যেমন ১৬ বছরের আগে ভর্তি হতে পারবেন না তেমনই শিক্ষকও নূন্যতম স্নাতক না হয়ে পড়ানোর সুযোগ পাবেন না। কোচিং সেন্টারগুলিকে বজায় রাখতে হবে নূন্যতম গুণতম মান যেখানে পড়ুয়ারা তাঁদের প্রয়োজনীয় সমস্ত পাঠ্যের জোগান পাবেন। থাকবে তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থাও। বইমুখো পাঠ্যের বদলে বহুমুখী পাঠ্যে উৎসাহ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত কোচিং ক্লাস ইতিমধ্যেই রেজিস্টার্ড রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও যোগ্যতা দেখিয়ে নিতে হবে ছাড়পত্র। পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল, স্বাস্থ্যবিধি, নিরাপত্তা–নজর দিতে হবে সব কিছুতেই। এমনকী, যে সমস্ত শিক্ষকরা পড়াচ্ছেন তাঁদের বিস্তারিত বিবরণও জানাতে হবে বলে জানানো হয়েছে নির্দেশিকায়। যদি কোনও শর্ত লঙ্ঘন করা হয় সে ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন বাতিল হতে পারে এমনও জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রক।
গত কয়েক বছরে রাজস্থানের কোটা, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে এমন অজস্র কোচিং সেন্টার খোলা হয়েছে যেখান থেকে প্রধানত স্নাতক স্তরের প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেন পড়ুয়ারা। এই কোচিং সেন্টারগুলিকে কেন্দ্র করে বিশাল ব্যবসা গড়ে উঠেছে ওই দুই শহরে। পড়ুয়ারা সেখানে রীতিমতো হোস্টেলে থেকে প্রবেশিকার জন্য পড়াশোনা করেন। এছাড়াও প্রতিটি ছোট-বড়-মেজো শহরেও এমন কোচিং সেন্টার অগণিত। প্রবেশিকার চাপ সহ্য করতে না পেরে পড়ুয়াদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও বাড়ছে বিপুল হারে। আবার বহু সংস্থা অনেক ছোট থেকেই অনলাইনে বা অফলাইনে কোচিং দিয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশ তাদের উপর কীভাবে এবং কতটা বলবৎ হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে নিশ্চিতভাবেই কোচিং ব্যবস্থার শিকড় ধরে টান পড়ছে, সন্দেহ নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.