অভিজিৎ ঘোষ, উদয়পুর: জয়পুর থেকে জয়সলমেঢ়, যোধপুর থেকে মাউন্ট আবু। কম করে টানা ১২৫০ কিলোমিটার রাজস্থান (Rajasthan) ঘুরছি। দেখে বোঝার উপায় নেই রাজ্যে ভোটের বাকি মাত্র ২৬ দিন!পোস্টার নেই, ফেস্টুন নেই, দেওয়াল লেখাও নেই। প্রার্থী ঘোষণাও বাকি। রাজস্থান রয়েছে তার নিজের ঘরানায়।
রাজস্থান কংগ্রেসে (Congress) দুই লবি সর্বজনবিদিত। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট (Ashok Gehlot), অন্যদিকে রাজেশ পাইলট-পুত্র শচীন (Sachin Pilot)। ২০২০-তে দুই লবির লড়াইয়ে কংগ্রসের তখত যায় যায় আর কী! জল বহুদূর গড়ানোর পর হাই কমান্ডের হস্তক্ষেপে লোহা ঠান্ডা হয়েছিল। সরকার থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেও সরকারের উপর চাপ তৈরির জন্য বছর পঞ্চাশের শচীন নিজের লবিকে দম দেওয়া পুতুলের মতো কাজে লাগিয়ে গিয়েছেন। সেই দম দেওয়া পুতুলের ঢঙে মাঝেমধ্যেই বিধায়কদের মুখে শোনা গিয়েছে, গেহলটের পর সর্বজনগ্রাহ্য নেতা তো শচীনজিই! অর্থাৎ গেহলট সরলে যাতে দ্বিতীয় কোনও নাম উঠে না আসে, তার ভূমিকা তৈরি করেই রাখা হয়েছে।
অন্যদিকে গেহলটও জানেন, তিনি এক্সট্রা ইনিংস খেলছেন। গতবারেই তাঁর তখতে থাকার কথা ছিল না। শচীনকে মুখ্যমন্ত্রী করলে তারুণ্যের বার্তাও যেত। খোদ রাহুল গান্ধী তাঁকে চাননি। শুধু সোনিয়া গান্ধীর প্রশ্রয়ে থেকে গিয়েছেন। তাই তিন-তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী। তবে এবার অন্তত জানেন শিকে ছেঁড়ার সম্ভাবনা ৫ শতাংশও নেই। বয়সও ৭২ পেরিয়ে ৭৩ ছুঁয়েছে। যদি কংগ্রেস ক্ষমতায় আসেও, তা হলে ৭৮-এ শেষ করবেন? হতেই পারে না। তাই হেঁয়ালি শুরু করেছেন বৃদ্ধ গেহলট। বলছেন, আমি কুর্সি ছাড়তে চাইলেও কুর্সি আমাকে ছাড়ছে কই। অর্থাৎ ইহাও হয়, উহাও হয়। যদি জেতেন এবং কুর্সি না পান তা হলে বলবেন, আমি তো ইঙ্গিত দিয়েইছিলাম। আর শচীন এই লড়াইয়ে জিতে গেলে বলবেন, অবশেষে আমি যা চেয়েছিলাম সেটাই হয়েছে। কুর্সি আমাকে ছেড়েছে।
আবার এটাও ঠিক, এবারের ভোটের লড়াইয়ে গেহলটকে সামনে রেখেই নির্বাচনে নামছে কংগ্রেস। যথাযথ গুরুত্ব পাবেন শচীনও। শচীনের দেওয়া প্রস্তাবিত প্রার্থী তালিকাও গেহলট পাঠাচ্ছেন হাই কমান্ডের কাছে। দু’পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখার সবরকমের চেষ্টা থাকবে। কিন্তু দলটার নাম যেহেতু কংগ্রেস। তাই শেষ কথা কে বলবে!
কিন্তু ২০২৩-এর বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের ট্রাম্প কার্ড কী? সেটা কিন্তু যথেষ্ট শক্তিশালী। তার বিরুদ্ধে লড়াইটা যে সহজ নয়, সেটাও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বিজেপি। আর তার জন্যই কী মুখমন্ত্রীর ছেলের বাড়িতে এজেন্সি অভিযান? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মিটিমিটি হাসছেন। বলছেন, সব ঘটনাই ইঙ্গিত দিয়ে যায়। এটাও তার ব্যতিক্রম হবে কী করে?
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.