দীপাঞ্জন মণ্ডল, নয়াদিল্লি: এনআরসি নিয়ে দেশজুড়ে কম রাজনৈতিক বিতণ্ডা হয়নি। মূলত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ও পর্যবেক্ষণেই অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি হয়। এবার, সেই এনআরসি নিয়ে আদালতের বাইরে মুখ খুললেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। রবিবার তিনি বলেন, অসম এনআরসি এ মুহূর্তের কোনও নথি নয়, ভবিষ্যতের এক ভিত্তি। ‘পোস্ট কলোনিয়াল অসম’ শীর্ষক একটি গ্রন্থের প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘বেআইনি অভিবাসীদের সংখ্যা কিছুটা সুনিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’
আগামী ১৭ নভেম্বর অবসর গ্রহণ করছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। এনআরসি-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা তাঁর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চেই উঠেছিল। অবসর গ্রহণের আগেও তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় দেবেন। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রও অবসর গ্রহণের আগে ৩৭৭ ধারা বাতিল-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিলেন। সেই প্রথা বজায় রাখবেন বর্তমান প্রধান বিচারপতিও। চলতি মাসেই অযোধ্যা জমি বিবাদের মতো দীর্ঘ পুরনো ও ঐতিহাসিক মামলার রায় দান করবে তাঁর নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ। আজ, সোমবার থেকে শুরু করে প্রধান বিচারপতি ১০টি কাজের দিন পাবেন তাঁর অবসর গ্রহণ করার আগে। তার আগেই যে প্রধান চারটি মামলার রায় তিনি দেবেন সেগুলি হল, রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বা অযোধ্যা মামলা, কেরলের শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সের মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনা সংক্রান্ত মামলা, রাফাল নথি সংক্রান্ত মামলা এবং আরটিআই আইনে সুপ্রিম কোর্ট এবং প্রধান বিচারপতির অফিসারদের ‘পাবলিক অথরিটি’ বলা যাবে কি না সেই সংক্রান্ত মামলা।
এদিন, এনআরসি প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এর মাধ্যমে বিষয়টিকে একটি যথাযথ প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করা গেল। জাতীয় নাগরিক পঞ্জি শেষ পর্যন্ত যা দাঁড়াতে পারে, তাতে এটা এই মুহূর্তের কোনও নথি নয়। ১৯ লক্ষ, না ৪০ লক্ষ, সেটা ব্যাপার নয়। এটা হল ভবিষ্যতের ভিত্তি।” পাশাপাশি, সংবাদমাধ্যমের একাংশের বিরুদ্ধেও দায়িত্বজ্ঞানহীন খবর প্রকাশের অভিযোগ তুলে তোপ দেগেছেন প্রধান বিচারপতি। তিনি দাবি করেছেন, এর ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দায়িত্বজ্ঞানহীন রিপোর্টিং পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে। বেআইনি অভিবাসীদের সংখ্যা কিছুটা পরিমাণ নিশ্চিত করার জরুরি প্রয়োজন ছিল, যে কারণেই সাম্প্রতিক এনআরসি প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে, তার কমও কিছু নয়, অধিকও কিছু নয়।
এর আগে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র তাঁর সময়কালে ৩৫টি রায় প্রদান করেছেন। যার মধ্যে ৩৭৭, ৪৯৭ ধারার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। আর সবগুলিই এক-একটি ঐতিহাসিক রায় ছিল। সেই মতো প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ঐতিহাসিক কিছু রায় দিতে চলেছেন। আর এই রায়গুলি দেশের ভবিষ্যতের উপর অনেকটাই প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন আইনি বিশেষজ্ঞরা।
[আরও পড়ুন: ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থন আছে, সরকার গঠন নিয়ে বিজেপিকে বার্তা শিব সেনার]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.