নন্দিতা রায়: আগামী সপ্তাহের প্রথমদিন, সোমবারই লোকসভায় পেশ করা হবে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল। অবশ্য বিলটি নিয়ে আলোচনা হবে পরের দিন, মঙ্গলবার। নাগরিকত্ব বিলের উপর আলোচনার জন্য চার ঘণ্টা সময় বরাদ্দ হয়েছে। এদিকে, বিতর্কিত বিলটির প্রতিবাদে উত্তাল অসম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সরকারের তরফে একথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। লোকসভায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে সরকারপক্ষের যে বিলটি পাশ করাতে কোনও অসুবিধা হবে না, সেকথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। লোকসভায় পাস হওয়ার পরে বিলটি বুধবারই রাজ্যসভায় পেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানেও বর্তমানে সরকারপক্ষ সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। শিবসেনা ইতিমধ্যেই বিল সমর্থন করার ইঙ্গিত দিয়েছে। বিজেডি-ও বিলটিকে সমর্থন করবে বলেই খবর। টিডিপি, এআইডিএমকে, টিআরএস-এর মতো দক্ষিণের দলগুলি বিলটির বিপক্ষে নয়। রাজ্যসভায় বিল নিয়ে ভোটাভুটি হলে এই দলগুলির সাংসদরা হয় বিলের পক্ষে ভোট দেবেন, অন্যথায় ওয়াক আউটও করতে পারেন। দুই পরিস্থিতিতে সরকার পক্ষেরই সুবিধা হবে।
এই হিসাবে চলতি শীতকালীন অধিবেশনেই সংসদের দুই কক্ষে নাগরিকত্ব বিল পাস হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। যদি এই বিলটি পাস হয়, তাহলে এটাই হবে প্রথম বিল যেখানে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। চলতি বছরের জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথমবারের আমলে এই বিলের আর একটি সংস্করণ লোকসভায় পাস হয়। কিন্তু রাজ্যসভায় বিরোধীদের আপত্তিতে তা পেশ করা যায়নি। এবারে অবশ্য পরিস্থিতি যে আলাদা তা সকলেই বুঝতে পারছেন।
নাগরিকত্ব বিলে যে যে প্রস্তাব রয়েছে তার অন্যতম হল, অনাবাসী ভারতীয় বা ওসিআই কার্ডধারীদের মধ্যে যাঁরা নাগরিকত্ব আইন ভঙ্গ করবেন বা অন্য কোনও আইন ভঙ্গ করবেন তাঁদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়া হবে। ওই বিলের খসড়ায় উত্তর-পূর্ব ভারতকে এর থেকে বাদ রাখা হয়েছে, যেখানে এই নিয়ে প্রবল প্রতিবাদ হয়েছে। এর পাশাপাশি এই বিলের ফলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের অমুসলিম নাগরিকদের ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম হবে। বিরোধীরা এই বিলের বিরোধিতা করেছেন। তাঁদের অনেকগুলি আপত্তির একটি হল, এই বিলে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্য রয়েছে। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর এই বিলকে ‘মূলগতভাবে অসাংবিধানিক’ বলে অভিযোগ করেন।
১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনে বলা হয়েছিল এই দেশের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করার আগের ১২ মাস এদেশে বসবাস করতে হবে এবং গত ১৪ বছরের মধ্যে ১১ বছর এদেশে বসবাস করতে হবে। সংশোধন হলে দ্বিতীয় শর্তের সময়সীমা ৬ বছর হবে ওই তিন দেশের অমুসলিম নাগরিকদের ক্ষেত্রে। বিলে বলা হয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের যাঁরা ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪-র আগে এদেশে এসেছেন এবং ধর্মীয় নিপীড়নের ফলে বাধ্য হয়েছেন এদেশে আশ্রয় নিতে, তাঁরা ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করতে পারবেন।
[আরও পড়ুন: অগ্নিমূল্যে নাভিশ্বাস, বিদেশ থেকে সাত দিনে ২১ হাজার টন পিঁয়াজ আনছে কেন্দ্র]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.