সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় বায়ুসেনা প্রধানের হুঁশিয়ারি কার্যত অগ্রাহ্য করে ফের মহা বিতর্কিত ডোকলামে সক্রিয় হল ‘ড্রাগন’। ডোকলামের বিতর্কিত এলাকা (যেখানে দু’দেশের সেনা দু’মাস ধরে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছিল) থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দূরে একটি রাস্তা তৈরির কাজ শুরু করেছে চিন। এই বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই বিদেশমন্ত্রককে জরুরি ভিত্তিতে ‘ব্রিফ’ করেছে। ডোকলাম মালভূমিকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে চিন ও ভুটান দু’দেশই। তবে এই ইস্যুতে ভারত বরাবরই ভুটানের পাশে থেকেছে। এবার সেই বিতর্কিত এলাকাতেই ফের সেনা মোতায়েন করছে চিন। অত্যন্ত গোপনে সেখানে ধীরে ধীরে পিএলএ বা পিপলস লিবারেশন আর্মির সদস্য সংখ্যা বাড়াচ্ছে বেজিং, জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা পিটিআই।
জুন মাসে এই ডোকালামে সেনা সমাবেশ ঘিরে ভারত ও চিনের সম্পর্ক তপ্ত হয়ে উঠেছিল। ওই ভূখণ্ড বেজিংয়ের, এই দাবিকে সামনে রেখে চিনা সেনা ডোকলামে ঢুকে পড়েছিল। একইভাবে ভারতীয় সেনাও ভুটানের পাশে দাঁড়াতে ডোকালামে পৌঁছায়। দু’দেশের সেনার মধ্যে ব্যবধান ছিল বড় জোর ১৫০ মিটার। প্রায় প্রতিদিনই উভয় দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে হুমকি দিয়ে চলছিল। প্রায় ৭০ দিন একে অপরের চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়েছিল ভারত ও চিনের সেনা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লি-বেজিংয়ের সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ভারতের তরফে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনের তরফে সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং উদ্যোগী হয়ে ওই সমস্যার সমাধান করেন। সে সময় দিল্লির আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, চিন বুলডোজার এবং রাস্তা নির্মাণের অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে, চিনের আধিকারিকরা বলেছিলেন, তাঁদের রাস্তা নির্মাণের পরিকল্পনা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করছে। কিন্তু সেই বিতর্কের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের ডোকলামের বিতর্কিত জায়গা থেকে বড় জোর ১২ কিলোমিটার দূরে একটি রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে চিন। ভারত এই নির্মাণ কাজের ঘোর বিরোধী। নয়াদিল্লি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ডোকালাম মালভূমিতে কোনও রকম পরিকাঠামো নির্মাণের কাজ মেনে নেওয়া হবে না। কারণ ডোকালামে রাস্তা নির্মাণের কাজ সম্পূর্ণ হলে চিন সহজেই ওই রাস্তা ব্যবহার করে ‘চিকেন নেক’-এ পৌঁছে যাবে। চিকেন নেক-এ পৌঁছে যাওয়ার অর্থ হল ভারতের ঘাড়ের উপর নিশ্বাস পড়বে চিনের। সে ক্ষেত্রে বেজিং মনে করলে যে কোনও সময় সিকিমে ঢুকে আসতে পারে। যা নয়াদিল্লির কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। সে কারণেই ভারত বরাবরই ডোকালামে চিনের যে কোনও পরিকাঠামো নির্মাণের কাজের বিরোধিতা করে আসছে। জুন মাসে ডোকালামে ভারতের কাছে বাধা পেয়ে চিন সরে গিয়েছিল। তাই এবার তারা সরাসরি সেনা সমাবেশ না করে ডোকালামে অব্যবহৃত একটি রাস্তার সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে এবং এই কাজে তদারকিতে নিয়োগ করেছে ৫০০-রও বেশি লালফৌজ। এর আগে জুন মাসে চিকেন নেক সংলগ্ন এলাকায় চিনের একটি রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল সেনাবাহিনী।
ঘটনার প্রেক্ষিতে এক সেনা অফিসার জানিয়েছেন, রাস্তা তৈরির নামে চিন আসলে ডোকলাম নিয়ে তাদের দাবি বজায় রাখতে চাইছে। অর্থাৎ ডোকলাম যে তাদেরই ভূখণ্ড ঘুরিয়ে সেটাই বোঝাতে চাইছে বেজিং। গতকালই দেশের এয়ার চিফ মার্শাল বি এস ধানোয়া হুঁশিয়ারি দেন, চিনের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত বায়ুসেনা। গতমাসে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতও বলেছিলেন, দেশের দু’প্রান্তেই সমান্তরাল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত সেনাবাহিনী। চিন বাড়াবাড়ি করলে তা ঠেকাতে ভারতের কোনও সমস্যা হবে না। প্রয়োজনে একই সঙ্গে চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে টক্কর দিতে প্রস্তুত সেনাবাহিনী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.