নন্দিতা রায়, নয়াদিল্লি: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র অরুণাচল সফর নিয়ে চিনের আপত্তিকে পাত্তাই দিল না ভারত। ভারতের কোন রাজ্যে কে যাবে তা নিয়ে অন্যদের আপত্তি কেন, তা ভারতের মানুষ বুঝতে পারছে না বলেই বেজিংয়ের আপত্তিকে কার্যত নস্যাৎ করে দিয়েছে নয়াদিল্লি। একইসঙ্গে অরুণাচল প্রদেশ যে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সে কথাও উল্লেখ করেছেন রাবিশ কুমার।
বৃহস্পতিবার অরুণাচল প্রদেশের রাজধানী ইটানগরে ৩৪তম রাজ্যনির্মাণ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান-সহ একগুচ্ছ কর্মসূচিতে যোগ দেন শাহ। আর তা নিয়েই আপত্তি চিনের। অরুণাচল প্রদেশকে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ বলেই চিনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়। যদিও সেই দাবিকে প্রতিবারেই উড়িয়ে দিয়েছে ভারত। তা সত্ত্বেও অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চিনের দীর্ঘদিনের নাক গলানোর অভ্যাস যে পাল্টায়নি, এদিনের ঘটনা তারই প্রমাণ। অতীতেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে রাজনাথ সিংয়ের অরুণাচল সফরের সময়েও চিন আপত্তি জানিয়েছিল। সেবারেও অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলেই পালটা যুক্তি দিয়েছিল ভারত।
বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রাবিশ বলেন, “অরুণাচল প্রদেশকে ভারত নিজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলেই মনে করে এবং তাকে কোনওভাবেই আলাদা করা যাবে না। ভারতের নেতারা নানা সময়ে অরুণাচল প্রদেশ সফর করেন। যেমন দেশের অন্য জায়গায় যান। চিনের তা নিয়ে আপত্তি ভিত্তিহীন।” শুধু নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেই থেমে যাননি তিনি। একইসঙ্গে চিনকে কটাক্ষও করেছেন বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র। তিনি আরও বলেন, “ভারতের কোনও নেতা দেশের একটি রাজ্যে সফর করছেন। তা নিয়ে চিনের আপত্তির কী কারণ থাকতে পারে তা ভারতের মানুষ বুঝতে পারছে না।”
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বিবাদ মেটাতে এখনও পর্যন্ত দুই দেশের প্রতিনিধিস্তরে ২২ বার আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তারপরেও তা যে মেটেনি, শাহ-র সফরে চিনের আপত্তি তোলা থেকেই তা স্পষ্ট। এদিন শাহ-র সফরের বিরোধিতা করে চিন অভিযোগ করে, এতে আঞ্চলিক ভারসাম্য লঙ্ঘন হচ্ছে এবং দুই দেশের মধ্যে যে রাজনৈতিক বিশ্বাস রয়েছে, তার উপর আঘাত। কিন্তু চিনের অভিযোগের জবাবে পাল্টা অভিযোগ করার রাস্তায় না হেঁটে ভারত কূটনৈতিকভাবেই নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে। চিন নিয়ে ভারত যে কঠোর নীতি নিয়েই চলবে, তা কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের প্রথম দফা থেকেই স্পষ্ট করা হয়েছিল। সেই অবস্থানেই যে কেন্দ্র অনড় রয়েছে, এদিন সেই বার্তাও মিলেছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
একদিকে চিন ও ও অন্যদিকে পাকিস্তান, দুই পড়শি দেশ বরাবরই জোট করে ভারতের বিরুদ্ধেও সবসময় সরব হয়ে থাকে। পাকিস্তানের ভারত বিরোধিতায় অধিকাংশ সময় চিনই সর্বাগ্রে তাদের পাশে দাঁড়ায়। এমন নজির ভূরিভূরি রয়েছে। তাই চিনের ক্ষেত্রেও কঠোর অবস্থান বজায় রাখাই নয়াদিল্লির বিদেশ নীতির অংশ। এবং চিনের প্রতি কেন্দ্র যাতে নরম অবস্থান গ্রহণ না করে, সেজন্য বিজেপির মতাদর্শগত অভিভাবক রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দীর্ঘদিন ধরেই চাপ রেখে চলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.