সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচন পর্ব সম্পন্ন হওয়ার পর দেশের নয়া সেনাপ্রধান হিসেবে লেফটেনান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। গত কয়েক বছর ধরে সীমান্তে লালফৌজের আগ্রাসনের মাঝে তাঁকে এই পদে বহাল গভীর কূটনৈতিক চাল হিসেবে দেখছে বিশেষজ্ঞ মহল। সেনাবাহিনীতে ৪০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই আধিকারিক উত্তর ও পূর্ব ভারতকে চেনেন হাতের তালুর মতো। তাই চিন সীমান্তে চলতে থাকা সমস্যাকে সামাল দিতে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, অত্যন্ত বিবেচনা করেই লেফটেনান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীকে আনা হয়েছে দেশের সেনাপ্রধানের পদে।
উপেন্দ্র দ্বিবেদীর দীর্ঘ ৪০ বছরের সার্ভিস কেরিয়ারে যদি নজর রাখা যায় তাহলে দেখা যাচ্ছে, কর্মসূত্রে উত্তর ও পূর্ব ভারতকে কার্যত চষে ফেলেছেন তিনি। ১৮ জম্মু ও কাশ্মীর রাইফেলসের কমান্ড অফ রেজিমেন্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করে একে একে আসাম রাইফেলস ব্রিগেড, ইন্সপেক্টর জেনারেল, আসাম রাইফেলস(পূর্ব), হিমাচল প্রদেশের ৯ কর্পস-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। এছাড়া ২০২২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত নর্থান আর্মি কম্যান্ডারের ভাইস চিফ অব আর্মি স্টাফ পদে কর্মরত ছিলেন তিনি। একদিকে জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাস দমনে তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা তো বটেই চিন-লাদাখ সীমান্ত সংঘাতের সময় চিনের সঙ্গে আলোচনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন এই আধিকারিক।
একটা সময় ছিল যখন সীমান্ত রক্ষা বলতে ভারতের মূল নজর থাকত উত্তর ও পশ্চিমে। তাই মূলত পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলি সামাল দেওয়াই ছিল ভারতের প্রধান লক্ষ্য। সেনাপ্রধানও নিযুক্ত হতেন এই দুই অঞ্চল সম্পর্কে অবগত অভিজ্ঞ, দক্ষ কোনও শীর্ষ আধিকারিক। তবে সময় বদলেছে অর্থনৈতিক ভাবে বিধ্বস্ত পাকিস্তান ভারতের কাছে আর খুব একটা গুরুত্ব পায় না। বর্তমানে দেশের মাথাব্যাথার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে চিন। লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ, অরুণাচলপ্রদেশ এমনকী গত কয়েক বছরে সিকিম সিমান্তেও নজরে এসেছে লালফৌজের আগ্রাসন। লাদাখ, অরুণাচলে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে দেখা হয়েছে দুই দেশের সেনাকে। এহেন পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ চিন। তাই নীতিও বদলেছে। এহেন পরিস্থিতিতে লেফটেনান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীকে সেনা প্রধানের পদে আনার ঘটনায় কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে এবং চিন সীমান্ত সামাল দিতে অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ভারত সরকার। তাই সেনাপ্রধান পদে উপেন্দ্র দ্বিবেদীর নিয়োগ আসলে লালফৌজের আগ্রাসন রোখার কৌশলী পদক্ষেপ ভারতের।
উল্লেখ্য, লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদীর জন্ম ১৯৬৪ সালের ১লা জুলাই। তিনি রেওয়ার সৈনিক স্কুল থেকে পড়েছেন। ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজের প্রাক্তন ছাত্র তিনি। এছাড়া ডিফেন্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজে এম.ফিল এবং স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও মিলিটারি সায়েন্সে দু’টি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। নিজের কর্মজীবনে বহু পুরস্কারও পেয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ‘পরম বিশেষ সেবা পদক’, ‘অতি বিশেষ সেবা পদক’ এবং তিনটি ‘জিওসি-ইন-সি কম্যান্ডেশন কার্ড’ সহ একাধিক সামরিক স্বীকৃতি রয়েছে তাঁর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.