বিশেষ সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি: প্যাংগং লেকে চিনের সেতু বানানোর খবর অবশেষে মেনে নিল ভারত। লাদাখ (Ladakh) সীমান্তে দ্রুত সেনা পাঠানোর লক্ষ্যকে সামনে রেখে চিন প্যাংগং লেকের উপরে সেতু তৈরি করছে বলে দিনকয়েক আগেই সংবাদ সামনে এসেছিল। যা নিয়ে এতদিন পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে থাকলেও বৃহস্পতিবার তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে বিদেশমন্ত্রক (MEA)।
মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী (Arindam Bagchi) এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “প্যাংগং লেকে চিনের পক্ষ থেকে একটি সেতু তৈরির খবর সামনে এসেছে। এ বিষয়ে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে কেন্দ্রের। প্রায় ৬০ বছর ধরে অবৈধভাবে দখল করে রাখা এলাকায় চিন এই সেতুটি বেআইনিভাবে নির্মাণ করছে। সকলেই জানে, চিন দখল করে থাকলেও এই এলাকাটি তাদের বলে ভারত কখনও মেনে নেয়নি। যাতে দেশের নিরাপত্তার স্বার্থ কোনওভাবেই ক্ষুণ্ণ না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার সমস্ত রকম ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
বাগচী আরও বলেছেন, সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে কেন্দ্র বিগত সাত বছরে সীমান্ত পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। আগের চেয়ে অনেক বেশি সেতু ও রাস্তা তৈরি করেছে। যা স্থানীয় জনগণের যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে কাজে লাগার পাশাপাশিই সশস্ত্র বাহিনীকে লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল রয়েছে। চিনের সেতু তৈরির কথা স্বীকার করে নিলেও প্যাংগং লেকের উপরে ভারতের যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, সেই সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেছেন বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র। ২০২০ সালের গালওয়ান-কাণ্ডের সময় প্যাংগং হ্রদের ওই জমি চিন যে দখল করতে পারেনি, সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
প্রায় ছ’দশক আগে, ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময় প্যাংগং হ্রদের বড় অংশ-সহ লাদাখের আকসাই চিনের বিস্তীর্ণ এলাকার দখল নিয়েছিল ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ (PLA)। সেখানে প্যাংগং হ্রদের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার জন্য সেতুর পাশাপাশিই একটি সংযোগরক্ষাকারী রাস্তাও তৈরি করছে চিন। এর ফলে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (LAC) বিস্তীর্ণ অংশে দ্রুত সেনা, অস্ত্র এবং রসদ পাঠাতে পারবে তারা।
প্যাংগং লেককে (Panggong Tso) কেন্দ্র করে ভারত-চিন চাপানউতোর নতুন কোনও ঘটনা নয়। দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। প্যাংগং সংলগ্ন গালওয়ান উপত্যকা দখলে রয়েছে বোঝাতে নতুন বছরের শুরুর দিনেই চিনা সেনা সেখানে লাল পতাকা উত্তোলনের দাবি করে ছবি প্রকাশ করেছে। পালটা ভারতীয় সেনাও একইদিনে গালওয়ান উপত্যকাতে তিরঙ্গা ওড়ানোর ছবি দিয়ে বেজিংয়ের দাবি মিথ্যা বলে খারিজ করে। তার পরেই প্যাংগং লেকে চিনের সেতু তৈরির খবর সামনে এসেছে। যা নিয়ে এদিন বিদেশ মন্ত্রকের তরফে সাফাই দেওয়া হলেও এই ঘটনা নিঃসন্দেহে কেন্দ্র সরকারের অস্বস্তি বৃদ্ধি করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০-র এপ্রিলে প্যাংগং হ্রদের উত্তরে ফিঙ্গার এরিয়া-৮ থেকে অনুপ্রবেশ করে চিনা ফৌজ। চলে আসে ফিঙ্গার এরিয়া-৪-এর কাছে। জুন মাসে গালওয়ান সংঘর্ষের পরে দ্বিপাক্ষিক শান্তি আলোচনা শুরু হয়। তারই মধ্যে হ্রদের দক্ষিণের বেশ কিছু উঁচু এলাকার দখল নেয় ভারতীয় সেনা। দফায় দফায় আলোচনার পরে ফেব্রুয়ারিতে দু’পক্ষের সেনাই মুখোমুখি অবস্থান থেকে কিছুটা পিছিয়ে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.