সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লাগাতার অভিযানের জেরে গত ১৫ মাসে ৪০০ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। কার্যত ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে সংগঠন। গুরুতর এই পরিস্থিতিতে এবার মাথানত করল মাওবাদীরা। কেন্দ্র ও রাজ্যের উদ্দেশে বিবৃতি জারি করে মাওবাদীদের সেন্ট্রাল কমিটির তরফে জানানো হল, ‘অভিযান বন্ধ করুন, আমরা যুদ্ধবিরতিতে রাজি।’ শুধু তাই নয়, অভিযান বন্ধ করলে কেন্দ্র ও রাজ্যের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসতেও রাজি হয়েছে মাওবাদী সংগঠন। আগামী ৫ এপ্রিল বস্তার সফরে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর আগেই শান্তি লক্ষ্যে আলোচনার প্রস্তাব দিলেন মাওবাদী নেতা অভয়।
মাওবাদী মুখপাত্র অভয় তেলেগু ভাষায় তেলেগু ভাষায় এক বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। যেখানে লেখা হয়েছে, গত ২৪ মার্চ হায়দরাবাদের তাদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কমিটির বেশিরভাগ সদস্যই কোনও শর্ত ছাড়া সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ও যুদ্ধবিরতির পক্ষে মত দিয়েছেন। আরও বলা হয়েছে, এর আগে ছত্তিশগড়ের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিজয় শর্মা শান্তি আলোচনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে দণ্ডকারণ্য বিশেষ জোনাল কমিটির তরফে শর্ত দেওয়া হয়েছিল নিরাপত্তাবাহিনী ক্যাম্পে থাকুক আপত্তি নেই, কিন্তু কোনওরকম অভিযান যেন চালানো না হয়। তবে সরকার সে প্রস্তাব মানেনি। লাগাতার অভিযান চালানো হয়, যার জেরে গত ১৫ মাসে আমাদের ৪০০ জনের বেশি নেতা, কমান্ডার, পিএলজি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। শত শত কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই অবস্থায় নতুন করে মাওবাদীদের তরফে বার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে, “মানুষের স্বার্থে আমরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব করছি। আমাদের দাবি, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ এবং তেলেঙ্গানায় অভিযানের নামে হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হোক। নিরাপত্তাবাহিনীর জন্য যে নতুন ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে তা বন্ধ করা হোক। সরকার যদি আমাদের প্রস্তাবে সাড়া দেয় তাহলে আমরাও যুদ্ধবিরতিতে রাজি।” যদিও মাওবাদীদের শান্তি আলোচনার প্রস্তাব এই প্রথমবার নয়, ২০২১ সালেও একবার এই প্রস্তাব দেয় মাওবাদীরা। তবে তাতে এমন কিছু শর্ত দেওয়া হয়েছিল যা মানতে রাজি হয়নি তৎকালীন ভূপেশ বাঘেলের সরকার।
তবে এবার অবশ্য পরিস্থিতিতে কিছুটা বদল এসেছে। ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদমুক্ত ভারত গড়ার বার্তা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছত্তিশগড়ে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাওবিরোধী অভিযান আরও গতি পেয়েছে। ২০২৪ সালে বস্তার অঞ্চলে নিরাপত্তাবাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছে ২৮৭ জন মাওবাদীর। গ্রেপ্তার হয়েছে হাজারেরও বেশি, পাশাপাশি আত্মসমর্পণ করেন ৮৩৭ জন। এরপর চলতি বছরে মাত্র ৩ মাসে এখনও পর্যন্ত ১৩০ জন মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। শুধুমাত্র বস্তার রেঞ্জে সংখ্যাটা ১১০। মৃত মাওবাদীদের মধ্যে ‘মাথার দাম’ রয়েছে এমন বহু শীর্ষ স্থানীয় কমান্ডার নিকেশ হয়েছে। মাও অধ্যুষিত জেলার সংখ্যা ১২ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৬। কার্যত কোমর ভেঙে যাওয়ার পর এবার সরকারকে অভিযান বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দিল মাওবাদীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.