সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বড় হয়ে কী হবে কখনও ভেবে দেখেনি চেন্নাইয়ের ফুটপাতে শুয়ে থাকা বাচ্চা ছেলেটা৷ শুধু জানত, রোজ ঘুম থেকে উঠে তাকে ভিক্ষা করতে রাস্তায় নামতে হবে। তাতে অবশ্য কোনও আক্ষেপ ছিল না তার। কিন্তু একটা দিন পুরো জীবনটাই পাল্টে দিল তার। চেন্নাইয়ের ফুটপাত থেকে ইংল্যান্ডের রাজপথে পা রাখে জয়াভেল। ফুটপাতের সেই খুদে এখন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাডভান্স অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র।
ফসলের ক্ষতি হওয়ায় নেল্লোরের ভিটে ছেড়ে পরিবারের সঙ্গে চেন্নাই চলে আসে জয়ভেল। তারপর থেকে ফুটপাতই তাদের ঠিকানা। বছরের বেশ কয়েকটা দিন না খেয়েই কেটে যেত। সেই ‘স্পেশাল’ দিনটা না এলে হয়তো এভাবেই কাটত তাঁর জীবন। তাকে ফুটপাত থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নতুন জীবন দিলেন উমা মুথুরামন ও তাঁর স্বামী। যে জীবনের স্বপ্ন হয়তো সে স্বপ্নেও ভাবেনি।
প্রায় ১৭ বছরের আগের কথা। রাস্তায় জয়ভেলকে ভিক্ষা করতে দেখে তার সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন উমা ও তাঁর স্বামী। দু’জনই একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। অচেনা দম্পতির সঙ্গে ছেলেকে কথা বলতে দেখে বেশ রেগে গিয়েছিলেন জয়াভেলের মা। অন্য পথ শিশুদের পরিবারের লোকদের ডেকে উমা ও তাঁর স্বামীকে মারধর পর্যন্ত করার প্রয়াস করেছিলেন জয়াভেলের মা। পরে ঠান্ডা মাথায় উমা মুথুরামনের কথা শোনার পর ছেলেকে তাঁর সঙ্গে যাওয়ার অনুমতি দেন তিনি। জয়াভেলের সঙ্গে আরও কিছু পথ শিশুকে নিয়ে এসে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন উমা। প্রথম দিকে লেখাপড়ায় একেবারেই মন বসত না জয়াভেলের। ধীরে ধীরে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয় সে। ভাল নম্বর নিয়েই দ্বাদশ শ্রেণি পাস করে। ওই দম্পতির চেষ্টায় এডুকেশন লোন পেয়ে যায় জয়াভেল। পাড়ি দেয় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি ইতালিতে পড়াশোনার জন্য ডাক পেয়েছেন ২২ বছরের জয়াভেল। তার জন্য ৮ লক্ষ টাকা জোগাড়ও করে ফেলেছেন উমার সংস্থা।
সেসব স্মৃতি মনে পড়লে আজও চোখ ছল ছল করে তাঁর। ভারতে এলেই চেন্নাইয়ের ফুটপাতে পৌঁছে যান জয়াভেল। ফুটপাতের এক কোণেই যে ছেলের অপেক্ষায় বসে থাকেন তাঁর মা। তাই ইঞ্জিনিয়ার হয়েও জয়াভেল মাটির কাছাকাছিই রয়ে গিয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.