ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়, চেন্নাই: কীভাবে বর্ণনা দেব ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্র অভিযানের? মেক ইন ইন্ডিয়ার সবচেয়ে বড় চমক! সম্পূর্ণ দেশজ প্রযুক্তিতে তৈরি হয়ে ভারতের যে যান পা রাখবে চাঁদের মাটিতে। একেবারে অনাবিষ্কৃত দক্ষিণ মেরুতে। যেখানে এটাই হবে চাঁদে ভারতের প্রথম পা। নাকি বলব নারী শক্তির সবচেয়ে বড় বিস্ময়! প্রথমজন এম ভনিতা। ইসরোর এই প্রোজেক্টের ডিরেক্টর। আরেকজন রিতু কড়িঢাল। দ্বিতীয় চন্দ্রযানের মিশন ডিরেক্টর। নামেই মালুম দুজনেই মহিলা। যে দুই ‘রকেট মানবী’-র কেরামতিতেই এই অভিযান অন্য মাত্রা পেয়ে গিয়েছে। যাকে দেশের নারী শক্তির সর্বোচ্চ উত্থানের উজ্জ্বল উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
[ আরও পড়ুন: গল্পে নয়া টুইস্ট, বিজেপি বিধায়কের মেয়ের বিয়েই হয়নি বলে দাবি মন্দিরের পুরোহিতের]
আজ, রবিবার নির্ধারিত ভারতীয় সময় রাত ২টো ৫১ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে ভারতের মাটি ছেড়ে উড়ে যাবে দ্বিতীয় চন্দ্রযান ‘ফ্যাট বয়’। যার গর্ভে থাকবে অরবিটর, বিক্রম ল্যান্ডার ও প্রজ্ঞান রোভার। ওড়ার ১৬ মিনিটের মাথায় পৃথিবীর নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছবে ফ্যাট বয়। তেলুগু সংবাদমাধ্যমে যে ইতিমধ্যে বাহুবলী তকমা পেয়েছে। পৃথিবীর কক্ষপথে চন্দ্রযানকে বুস্ট করে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হবে সে। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের কক্ষপথ থেকে ধীরে ধীরে সবচেয়ে দূরের কক্ষপথে পৌঁছে তা চাঁদের কক্ষপথে ট্রানজিট হবে। সেখান থেকে উলটো গতিতে ঘুরে চাঁদের মাটির কাছে পৌঁছে চার দিনের মাথায় তার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে নেমে বিচ্ছিন্ন হবে অরবিটর। এক বছর ধরে চাঁদকে প্রদক্ষিণ করে চলবে তার গবেষণা।
অন্যদিকে, ল্যান্ডার আলতো করে লাফিয়ে পড়বে চাঁদের বুকে। চার ঘণ্টা পর তার গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসবে ছয় চাকার রোভার। ল্যান্ডার ও রোভারের গায়ে আঁকা রয়েছে জাতীয় পতাকা। রোভার চাকায় আঁকা রয়েছে অশোক চক্র। জাতীয় প্রযুক্তির সবচেয়ে সেরা নিশানা বহন করবে এটি। ইসরোর গবেষকদের কথায়, সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্ত সেটি। পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছনোর এই সময়কাল ৫২ দিন। যা গবেষকদের কথায়, এখনও পর্যন্ত দেশজ প্রযুক্তিতে অন্যতম জটিল প্রক্রিয়া অবলম্বন করে এভাবে কোনও অভিযান হয়নি। বলা ভাল, সাহস দেখাতে পারেনি ভারত। সেই কারণে ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে কেন্দ্রের সরকারের মেক ইন্ডিয়া স্লোগানের জয়জয়কার।
একটা সময় যখন ল্যান্ডার ও অরবিটর বানায় ভারত। রোভার বানাবে রাশিয়া। তাদের একটি অভিযান ব্যর্থ হওয়াতেই সম্পূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয় ভারত। তৈরি হয় ৩. ৮ টন ওজনের সম্পূর্ণ চন্দ্রযান। জয়জয়কার অন্যদিক থেকেও। মনে রাখতে হবে প্রথমেই বলা আছে নারী শক্তির উত্থানের কথা। তার নিদর্শনের দিকে যদি আমরা তাকাই, সবার আগে মনে রাখতে হবে মঙ্গল অভিযানের কথা। যার পোশাকি নাম মার্স অরবিটর মিশন। সংক্ষেপে ‘মম’। ২০১৪-র যে অভিযানের এমন নাম থেকেই ইসরোর উদ্দেশ্যটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মঙ্গলের কক্ষপথে এমন বিশেষ নামের একটি অরবিটর পাঠিয়েই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ইসরো কোন পথে এগোচ্ছে। দেশের মহাজাগতিক গবেষণা সংস্থা সে সময় একটি ছবি প্রকাশ করেছিল। ভনিতা আর রিতু পরস্পরকে জড়িয়ে উল্লাস করছে। হাততালিতে ফেটে পড়ছে ইসরোর কন্ট্রোল রুম। চাঁদ নিয়ে নতুন গবেষণা থেকে নতুন খোঁজ হোক, বা তার মহাজাগতিক অবস্থিতির রহস্যের সন্ধান, সবটাই যে এই দুই ‘রকেট মহিলা’-র হাতে যেতে চলেছে সেটা পরিষ্কার হয়ে যায় আরও কিছুদিন পর।
[ আরও পড়ুন: ‘বটল ক্যাপ চ্যালেঞ্জ’-এ মাতলেন কিরণ রিজিজু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ নেটিজেনরা ]
২০১৭-১৮তেই একপ্রকার চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল চাঁদ নিয়ে গবেষণা কোন পথে যেতে চলেছে। বিশিষ্ট বিজ্ঞানী তথা প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের হাত থেকে কনিষ্ঠতম কৃতী বিজ্ঞানীর পুরস্কার নেওয়ার সময়েই বোধহয় নিজের ভাগ্য নিজে নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন রিতু। প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ভনিতাও সেরা বিজ্ঞানীর পুরস্কার পেয়েছেন। সেই দুই সেরার হাতেই এবার দায়িত্ব পড়েছে এই অভিযান নিয়ন্ত্রণের। এখানেই বোধহয় বিক্রম সারাভাইয়েরও সাফল্য। যাঁর হাতে তৈরি হয়ে আজ এই জায়গায় এসেছে ইসরো। তাঁর নামেই এবার তাই নাম রাখা হয়েছে ল্যান্ডারের। ইসরোর কথায়, চাঁদে নামার পর আরও একটি জটিল প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে এই অভিযানের। অরবিটর যেখানে এক বছর ধরে চাঁদের ম্যাপিং করে তার বৈশিষ্ট্য বোঝার চেষ্টা করবে, সেখানে ল্যান্ডার ও রোভারের আয়ু মাত্র ১৪ দিন, যা এক চন্দ্রদিনের সমান।
বিড়লা তারামণ্ডলের অধিকর্তা তথা বিশিষ্ট মহাকাশ গবেষক দেবীপ্রসাদ দুয়ারির কথায়, “ভারতের প্রথম চাঁদের অভিযানই সেখানে জলের প্রমাণ দিয়েছিল। দ্বিতীয় অভিযান সেখানে জলের অনুসন্ধান যেমন করবেই, তেমনই করবে চাঁদের পৃষ্ঠের একাধিক পরীক্ষা। সেখানে বায়ুমণ্ডল কেমন, চাঁদে কম্পন হয় কি না, সেখানে কী কী খনিজ রয়েছে সবই দেখা হবে।” তিনি আরও ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, “চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে জন্মের পর থেকে একটানা সূর্যকিরণ পড়েনি। ফলে চাঁদের গভীর গর্ভের অন্ধকারে সম্ভবত কোনও রাসায়নিক পরিবর্তনও হয়নি। সেই কারণেই সৃষ্টির আদি রহস্যের অনেক দিক উন্মোচিত হতে পারে।” মহাজগতের সেই বিশাল রহস্যের জাল কাটাতে আজ বাহুবলীর উৎক্ষেপণ। চোখ থাকবে আকাশে। মাঝরাতে ফ্যাট বয়ের লাফানো দেখতে।
🇮🇳#ISROMissions🇮🇳
The launch countdown of #GSLVMkIII-M1/#Chandrayaan-2 commenced today at 0651 Hrs IST. The launch is scheduled at 0251Hrs IST on July 15th.
More updates to follow…— ISRO (@isro) July 14, 2019
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.